বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সৈয়দ মুহাম্মদ আজম

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ১২:০৯ এএম

কে হাসছে আড়ালে: ইরান, ইসরায়েল না আমেরিকা?

সৈয়দ মুহাম্মদ আজম

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ১২:০৯ এএম

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি (বামে, ডোনাল্ড  ট্রাম্প (মাঝে) ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (ডানে)। ছবি- সংগৃহীত

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি (বামে, ডোনাল্ড ট্রাম্প (মাঝে) ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (ডানে)। ছবি- সংগৃহীত

তুমুল উত্তেজনার পর নাটকীয়ভাবে মঙ্গলবার সকালে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রত্যাশা অনুযায়ী, একে একে সব পক্ষই জয় ঘোষণা দেয়। তবে কূটনৈতিক বাস্তবতায় কে বিজয়ী বা পরাজিত হবে, তা নির্ধারণে সময় লাগবে আরও অনেকটা।

মধ্যপ্রাচ্যের দুপুর অবধিও শান্তি ফিরেনি। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ভোর পাঁচটায়, কিন্তু তারও দুই ঘণ্টা পর ইসরায়েল জানায়, তাদের দিকে ইরান থেকে ছোড়া অন্তত দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আটকানো হয়েছে। ইরান স্বীকার করেনি হামলার কথা, কিন্তু ইসরায়েল হুমকি দেয় পাল্টা ‘ধ্বংসাত্মক প্রতিশোধের’।

এই পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউস থেকে ন্যাটো সম্মেলনের পথে রওনা হওয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। রাগের তাপে ইসরায়েলকে সরাসরি সতর্ক করে বলেন, ‘তোমাদের পাইলটদের ফিরিয়ে নাও, নাহলে সেটা হবে বড় রকমের চুক্তিভঙ্গ’।

এ বক্তব্যে চাপে পড়েন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের রোষানলে পড়লে তা রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাই তিনি দ্রুত পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করেন।

অন্যদিকে, ইরান দাবি করে যে এই যুদ্ধবিরতি তারা নিজেরাই শত্রুর ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, ইরানের বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ধরা পড়ে, ক্ষয়ক্ষতিও সীমিত।

ট্রাম্প রাতেই সংবাদমাধ্যম এনবিসি-কে বলেছিলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতি চিরস্থায়ী হবে, আর কখনো ইরান ও ইসরায়েল একে অপরকে গুলি করবে না’। কিন্তু তার এই সাহসী ঘোষণার সত্যতা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

ট্রাম্প আরও দাবি করেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি একেবারে ‘নির্মূল’ করে দেওয়া হয়েছে। এই বক্তব্যের সুরে তাল মেলান নেতানিয়াহুও। বলেন, তারা ‘পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক হুমকি দুইটিকেই সরিয়ে দিয়েছে।’

বাস্তবে কী ঘটেছে? স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নাতানজ, ফোর্ডো ও ইস্ফাহানসহ একাধিক ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। ফোর্ডো ছিল পাহাড়ের গায়ে নির্মিত, কিন্তু সেখানেও ক্ষতি ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। সেন্ট্রিফিউজগুলো খুবই স্পন্দন-সংবেদনশীল, ফলে বোমার কম্পনেই সেগুলো ভেঙে যেতে পারে।

কিন্তু ভয়াবহ তথ্য হলো আইএইএ এখন আর জানে না ৪০০ কেজি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় আছে। এটা ছিল ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার হৃৎপিণ্ড। ঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে এ থেকে ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব।

ইরান জানায়, বোমা হামলার আগেই তারা এসব উপাদান সরিয়ে ফেলেছিল। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স স্বীকার করেছেন, ‘আমরা জানি না, কোথায় এই জ্বালানি। এখন ইরানিদের সঙ্গে বসে এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করব।’

বিশ্লেষক ইয়ান স্টুয়ার্ট লিখেছেন, ‘এটা বড় ব্যাপার। ১০টা পারমাণবিক বোমার মতো উপাদান হারিয়ে গেছে অথচ আইএইএ জানেই না সেটা কোথায়!’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক জেমস অ্যাক্টনের মতে, এই যুদ্ধ নন-প্রলিফারেশন (পারমাণবিক বিস্তার রোধ) ক্ষেত্রেই একটি ভয়াবহ ব্যর্থতা হয়ে উঠতে পারে। “যদি কোনো চুক্তি ইরানকে এই ইউরেনিয়াম রাখতে দিত, আমরা সেটাকে ‘ভয়াবহ চুক্তি’ বলতাম। কিন্তু এখন সামরিক হামলা করেও একই ফল হয়েছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান চাইলে মাত্র পাঁচ মাসেই এই ইউরেনিয়াম দিয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে। সেই উদ্দেশ্যে কাজ চালানোও সম্ভব নাতানজ বা কোনো অজানা শিল্প ভবনে, যা এখনো বোমার বাইরে। প্রফেসর জেফ্রি লুইস জানিয়েছেন, “ইরান যদি ‘বোমাবাজি’ শুরু করে তো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি হতে সময় লাগবে শুধুমাত্র পাঁচ মাস”।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ও মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, হামলার আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বোমা বানানোর নির্দেশ দেননি। কিন্তু এই হামলা হয়তো তাকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে প্রলুব্ধ করতে পারে।

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, এই হামলার ফলে যা প্রতিরোধ করতে চাওয়া হয়েছিল, ঠিক সেটাই এখন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

যদিও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বারবার হামলা চালিয়ে ইরানকে দমিয়ে রাখার আশায় রয়েছে, কিন্তু এমন হামলা কখনো চুক্তির বিকল্প হতে পারে না। চুক্তি থাকলে আইএইএ পর্যবেক্ষণ চালাতে পারত। এখন তারা অন্ধকারে।

বাস্তবে পরিস্থিতি আরও করুণ; অনিশ্চিয়তা ও ভয় আরও প্রকট হয়েছে। যদিও ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ট্রাম্প ও নাফতালীর সরকার বেশ কিছু ইঙ্গিত দিয়েছে, কিন্তু এখনই সেই পরিবর্তন চোখে পড়ে না। গণবিদ্রোহী নয়, বরং বর্তমানে সরকারের হাতে সমস্ত সামরিক শক্তি দেখতে পাচ্ছে পশ্চিমারা।

তাদের চোখে, সবচেয়ে দুঃখজনক হলো ইরানে ‘নারী, জীবন এবং স্বাধীনতা’ স্লোগানে যারা স্বাধীনতা চাইছিল, সেই সাধারণ মানুষই হয়তো সাময়িকভাবে সবচেয়ে বেশি হারাল। এখনই সরকার পতনের কোনো লক্ষণ নেই। বরং এই বোমার নিচে জাতীয়তাবাদের আগুন যেন আরও চড়া হয়েছে।

বিশ্লেষক জেফ্রি লুইস তার এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘এই হামলার মূল উদ্দেশ্য যদি বর্তমান ইরানের সরকারকে সরানো ছিল, কিন্তু তবুও যদি তারা পারমাণবিক বিকল্প হাতে রেখে টিকে যায়, তাহলে এ যুদ্ধ হবে একটি কৌশলগত ব্যর্থতা।’

Link copied!