যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি প্রাথমিকভাবে জয়লাভ করেছে। ৩৩ বছর বয়সী এই মুসলিম নেতার জয় বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক কে এই মামদানি?
সবাই জেনে অবাক হবেন যে, জন্মসূত্রে মামদানি পূর্ব আফ্রিকান দেশ উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার নাগরিক। তবে তিনি পরবর্তীতে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।
মাত্র ৭ বছর বয়সে চলচিত্র প্রযোজক মায়ের সঙ্গে আমেরিকায় পাড়ি জমান মামদানি। এরপর ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্সে পড়াশোনা করেন এবং পরে বোওডেন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানে তিনি ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ এর ক্যাম্পাস শাখার একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মুসলিম মেয়র হতে যাওয়া এই তরুণ নেতা তার পারিবারিক এতিহ্য ও বিচিত্র তুলে ধরে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেন। যেখানে তার প্রচারণার একটি ভিডিও পুরোপুরি উর্দু ভাষায় করেছেন। তাতে বলিউডের সিনেমার দৃশ্য যুক্ত করেছেন। আরেকটি ভিডিওতে তিনি স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেছেন।
মামদানির স্ত্রী ২৭ বছর বয়সী ব্রুকলিন সিরিয়ান শিল্পী রামা দুয়াজি। ডেটিং অ্যাপ ‘হিঞ্জ’ এর মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। বাবা অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তার বাবা-মা দুজনেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।
মামদানি নিজেকে গণমানুষের প্রতিনিধি এবং সংগঠক হিসেবে উপস্থাপন করেন।
তার স্টেট অ্যাসেম্বলি প্রোফাইলে লেখা হয়েছে, জীবন যখন অনিবার্য দিকে মোড় নিচ্ছিলো তখন সিনেমা, র্যাপ আর লেখালেখির বাঁকবদলে, সবসময়ই সংগঠন করা তার মাঝে এক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। যে কারণে বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ তাকে হতাশা নয়, বরং কাজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি আবাসন খাতের একজন কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন, যার মাধ্যমে কুইন্সে স্বল্প আয়ের বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতেন।
মামদানি তার মুসলিম পরিচয়কে তার প্রচারণার অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি নিয়মিত মসজিদে গিয়েছেন এবং শহরের উচ্চ জীবনযাত্রার খরচের সংকট নিয়ে উর্দু ভাষায় একটি প্রচারণার ভিডিও প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচনে মামদানির আলোচ্যসূচির মূল বিষয়ের একটি ছিল নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য জীবনযাত্রা সহজ করার প্রতিজ্ঞা। মামদানি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের ভোটাররা চায় ডেমোক্র্যাটরা সাশ্রয়ের ওপর গুরুত্ব দিক।
‘এটি এমন একটি শহর যেখানে চারজনের মধ্যে একজন দারিদ্র্যের সাথে বসবাস করছে, এমন একটি শহর যেখানে প্রতিরাতে পাঁচ লাখ শিশু ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমায়’, বলেন মামদানি।
শহরজুড়ে বিনামূল্যে বাস পরিষেবা। বাড়িভাড়া স্থির রাখা এবং অবহেলা করা বাড়িওয়ালাদের জবাবদিহির ব্যবস্থা করা। সাশ্রয়ী মূল্যের ওপর জোর দিয়ে শহরের নিজস্ব মুদি দোকানের চেইন সৃষ্টি করা। ছয় সপ্তাহ থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সারা শহরে বিনামূল্যে চাইল্ড কেয়ার প্রতিষ্ঠা। সাশ্রয়ী বাসস্থানের সংখ্যা তিন গুণ বাড়ানো, যা ইউনিয়নের মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে। তার পরিকল্পনায় মেয়রের অফিসের 'পুনর্বিন্যাস' বা সংস্কারও অন্তর্ভুক্ত, যাতে করে সম্পত্তির মালিকরা দায়বদ্ধ থাকে এবং চিরস্থায়ীভাবে সাশ্রয়ী বাসস্থানের সংখ্যা বাড়ানো যায়।
মামদানি তার প্রচারণায় এই নীতিগুলোকে চোখে পড়ার মতো এবং ভাইরাল, অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে সামনে এনেছিলেন।
তিনি বাসা ভাড়ার বিষয়টি তুলে ধরতে আটলান্টিক সাগরে ডুব দিয়েছেন এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে তুলে ধরার জন্য একটি বারিতো (মেক্সিক্যান খাবার) দিয়ে একটি পাতাল রেল সাবওয়েতে রমজানের ইফতার করে রোজা ভাঙেন।
এছাড়া, তিনি ভোটের আগের দিন পুরো ম্যানহাটন হেঁটে গেছেন এবং ভোটারদের সাথে সেলফি তুলেছেন।