অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মার্কিন-সমর্থিত ও ইসয়েলি সামরিক-পরিচালিত হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) কর্তৃক বিতরণ করা আটার বস্তায় ‘অক্সিকোডোন’ ধরণের মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২৭ জুন) এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস (জিএমও)।
বিবৃতিতে বলা হয়, ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের মাঝে জিএইচএফের বিতরণ করা আটার বস্তায় ব্যথানাশক ‘অক্সিকোডোন’ ধরনের মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে। মাদকের এই বড়িগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে পিষে গুঁড়ো করা হয়েছিল বা ময়দার মধ্যেই দ্রবীভূত করা হয়েছিল, যা জনস্বাস্থ্যের উপর সরাসরি আক্রমণ।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ‘গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা’ জানিয়েছে জিএমও। ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে বলেছে, ‘আমরা ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে এই জঘন্য অপরাধের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী করছি। তারা মাদকাসক্তি ছড়িয়ে ফিলিস্তিনের সামাজিক কাঠামোকে ভেতর থেকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে। এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যার সম্প্রসারণ করছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, “বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নোংরা যুদ্ধে ইসরায়েলি দখলদারদের মাদককে নরম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার এবং ‘সহায়তা ও সহায়তা’ হিসেবে এই পদার্থ পাচারের জন্য অবরোধকে কাজে লাগানো যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।”
এদিকে শুক্রবার গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে অপেক্ষায় থাকা অন্তত ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এই বিতরণ কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। ইসরায়েল আংশিকভাবে অবরোধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর, মে মাসে জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু করে। যদিও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জিএইচএফ-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এটিকে ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যায় সহায়তা করার অভিযোগ তুলেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে অন্তত ৫৪৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এই উদ্যোগকে ‘ঘৃণ্য কাজ’ বলে উল্লেখ করেছে, যা ফিলিস্তিনিদের জীবনকে আরও বিপদের মুখে ফেলছে। একইসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র থামিন আল-খেতান ইসরায়েলের ‘খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ করার কৌশলের কড়া সমালোচনা করেছেন।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ এক বিস্ফোরক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) সরাসরি সৈন্যদের নির্দেশ দিয়েছে যেন নিরস্ত্র, শান্তিপূর্ণ ফিলিস্তিনিদের গুলির লক্ষ্য করা হয়, যদি তারা কোনো হুমকি না হয়।
একজন সৈনিক হারেৎজ–কে বলেন, ‘আমরা ট্যাঙ্ক থেকে মেশিনগান ও গ্রেনেড ছুড়েছি। এমন ঘটনাও ঘটেছে, যেখানে কুয়াশার মধ্যে অগ্রসর হওয়ার সময় একদল সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে।’
আরেক সৈনিক জানান, তিনি যেই এলাকায় মোতায়েন ছিলেন, সেখানে ‘প্রতিদিন এক থেকে পাঁচজন মানুষ নিহত হচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘এটা যেন একটা বধ্যভূমি’।
এই বিবৃতি ও রিপোর্টের পর গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ‘‘নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ এবং খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষদের লক্ষ্য করে কামান ও ভারী অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে ইসরায়েলি বাহিনী ‘ত্রাণের’ আড়ালে একটি পরিকল্পিত গণহত্যা চালাচ্ছে।”
তথ্যসূত্র: আনাদোলু, মিডল ইস্ট মনিটর