ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

অস্তিত্ব সংকটে নেতানিয়াহুর সরকার, জোটে ভাঙন

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ০৬:০১ পিএম
‘ইসরায়েল’-এর সংসদ নেসেটের সদস্যরা। ছবি- সংগৃহীত

সম্প্রতি সামরিক চাকরি নিয়ে মতবিরোধের জেরে ‘ইসরায়েল’-এর ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে গেছে ধর্মীয় দল ইউনাইটেড তোরাহ জুডাইজম (ইউটিজে)। দলটির ছয় সংসদ সদস্য হঠাৎ করেই সংসদের বিভিন্ন কমিটি ও সরকারি মন্ত্রণালয়ের পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতি-অর্থোডক্স ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীতে না যাওয়ার অধিকার নিশ্চিতের আইন পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার। ফলে ওই ছয় সাংসদ সরকারি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এতে নেতানিয়াহুর জোট পার্লামেন্টে অল্প সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে তাদের হাতে এখনও প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে।

ইউটিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, আরেকটি অতি-অর্থোডক্স দল শাস-ও একই পথ অনুসরণ করতে পারে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তারা জোট ত্যাগ করলে নেতানিয়াহু সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে, যা ‘ইসরায়েল’-এর প্রধান কট্টরপন্থী লেকুদ পার্টি লেকুদ অস্তিত্ব সংকট তৈরি করবে।

ইউটিজে সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের পদত্যাগ ৪৮ ঘণ্টা পর কার্যকর হবে। এই সময়ের মধ্যেই নেতানিয়াহুকে তার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

যদি নেতানিয়াহু সংকটের সমাধানে ব্যর্থও হন, তবুও জুলাইয়ের শেষে সংসদ গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে যাবে। ফলে, তিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও তৎক্ষণাৎ পদচ্যুত হবেন না এবং সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য হাতে আরও তিন মাস সময় পাবেন।

এদিকে, কাতারে চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনার কারণে নেতানিয়াহু তার জোটের অতি-ডানপন্থি দলের চাপের মুখে পড়েছেন।

‘ইসরায়েল’ ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার লক্ষ্য হলো গাজায় ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা। এতে হামাসের হাতে আটক থাকা জিম্মিদের অর্ধেককে মুক্ত করার পাশাপাশি গাজার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হবে। এই চুক্তি যদি কার্যকর হয়, তাহলে এটি যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করার আরও একটি ধাপ হয়ে উঠতে পারে।

তবে নেতানিয়াহুর জোটসঙ্গী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ যুদ্ধ বন্ধের বিরুদ্ধে এবং হামাসের ওপর অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তা সত্ত্বেও, নেতানিয়াহুর এখনো মন্ত্রিসভায় এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যাতে যুদ্ধবিরতির মতো সিদ্ধান্ত পাস করানো সম্ভব।

নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী টোপাজ লুক গত সপ্তাহে আর্মি রেডিওকে বলেন, ‘যদি সঠিক চুক্তিটি আলোচনায় উঠে আসে, প্রধানমন্ত্রী সেটি অনুমোদন করাতে পারবেন’।

এদিকে, গাজায় ২১ মাস ধরে চলা যুদ্ধ ‘ইসরায়েলি’দের মধ্যে ব্যাপক ক্লান্তি তৈরি করেছে। যুদ্ধের সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস হঠাৎ করে দক্ষিণ ‘ইসরায়েল’-এ হামলা চালায়। সেই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ‘ইসরায়েলি’ নিহত হন এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়ে পড়েন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ‘ইসরায়েল’-এর পাল্টা আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার প্রায় পুরো জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়েছে, চরম মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে এবং অঞ্চলটির বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ জন ‘ইসরায়েলি’ সেনা নিহত হয়েছে, যা কয়েক দশকের মধ্যে ‘ইসরায়েলে’র সবচেয়ে বেশি সামরিক মৃত্যু। এই ক্ষয়ক্ষতি আরও জোরদার করেছে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সংকট, বিশেষ করে সেনা নিয়োগ নিয়ে বিতর্কিত একটি নতুন বিলকে ঘিরে।

‘ইসরায়েলে’ দীর্ঘদিন ধরে অতি-গোঁড়া ধর্মীয় সেমিনারির ছাত্রদের বাধ্যতামূলক সামরিক চাকরি থেকে ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সাধারণ নাগরিক মনে করেন, এতে মূলধারার যুবকদের ওপর বাড়তি বোঝা পড়ছে, যা অন্যায্য ও বিভ্রান্তিকর। ফলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

অপরদিকে, অতি-গোঁড়া ইহুদি নেতারা বলেন, ধর্মীয় পড়াশোনা পূর্ণ সময়ের কাজ এবং তা পবিত্র। তাদের আশঙ্কা, যদি তরুণরা সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়, তাহলে তারা ধর্মীয় জীবন থেকে সরে যেতে পারে।

গত বছর ‘ইসরায়েলে’র সুপ্রিম কোর্ট এই বিশেষ ছাড় বাতিলের আদেশ দেয়। এরপর থেকে সংসদ একটি নতুন নিয়োগ বিল তৈরির চেষ্টা করছে, তবে সেটি এখনও ইউটিজে দলের দাবি অনুযায়ী সন্তোষজনক সমাধান দিতে পারেনি।