গাজায় নৃশংসতা বন্ধ না করলে ‘ইসরায়েলের’ ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির ৩১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানকে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান তাঁরা। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পী, কবি, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, সাংবাদিক ও অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা।
এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় ২২ মাসে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। দৈনিক গড়ে হত্যার শিকার হচ্ছেন ৯০ জনের বেশি। পাশাপাশি অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না নেতানিয়াহু সরকার। এতে করে সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অনাহারে–অর্ধাহারে দিন কাটছে গাজার বেশির ভাগ বাসিন্দার। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের ৩১ বিশিষ্ট নাগরিক দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার এই আহ্বান জানালেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন অস্কারজয়ী ইসরায়েলি চলচ্চিত্র নির্মাতা ইউভাল আব্রাহাম, ইসরায়েলের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাইকেল বেন–ইয়ার, ইসরায়েলের পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার আব্রাহাম বার্গ। এ ছাড়া ইসরায়েলের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘ইসরায়েল প্রাইজ’ পাওয়া বেশকিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিও এতে স্বাক্ষর করেছেন।
যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আরও রয়েছেন ইসরায়েলি চিত্রশিল্পী মাইকেল না’ আমান; আন্তর্জাতিক পুরস্কারজয়ী দেশটির তথ্যচিত্রনির্মাতা রা’ আনান আলেক্সান্দ্রোভিচ, গোল্ডেন লায়ন পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্র লেবানন-এর পরিচালক স্যামুয়েল মাওজ, ইসরায়েলি কবি আহারোন শাবতাই ও কোরিওগ্রাফার ইনবাল পিন্টো প্রমুখ।
বিবৃতিতে ইসরায়েলের এসব বিশিষ্ট নাগরিক বলেছেন, ‘গাজার বাসিন্দাদের অনাহারে রেখে মেরে ফেলতে চাইছে ইসরায়েল। পাশাপাশি উপত্যকাটির লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোর করে গাজা থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর এই নৃশংসতা বন্ধ না হলে এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর না করলে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।’
ইসরায়েলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দেশটির বিশিষ্ট নাগরিকদের এ ধরনের একটি যৌথ বিবৃতি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, ইসরায়েল সরকারের খোলামেলা সমালোচনা ও নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দেশটির নাগরিকদের এ ধরনের বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা বিরল। এ ছাড়া ইসরায়েল এমন একটি দেশ যেখানে এ ধরনের আহ্বান কেউ জানালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন ও বিধিবিধান রয়েছে।
এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের দুই শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা বেতসেলেম এবং ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েল প্রথমবারের মতো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলছে। ইসরায়েলের দুই মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকেও এ ধরনের বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা বিরল।