‘ইসরায়েলি’ হামলায় নিহত এক পরমাণু বিজ্ঞানীর তথ্য সরবরাহ করায় এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। দণ্ডপ্রাপ্ত বৃক্তির নাম রুজবেহ ভাদি। তিনি দেশটির পারমাণবিক শক্তি সংস্থার অধীনে পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য এবং একজন পরমাণু বিজ্ঞানী।
বুধবার (৬ আগস্ট) দেশটির বিচার বিভাগের অফিসিয়াল সংবাদমাধ্যম মিজান-এর বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জুনে ‘ইসরায়েল’-এর হামলায় কট্টর ইহুদিপন্থিদের হামলায় নিহত পরমাণু বিজ্ঞানীর তথ্য পাচার করেছিলেন রুজবেদ ভাদি। ভাদি ‘দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত নিরাপত্তার বিরুদ্ধে বিস্তৃত অপরাধ করেছেন, যা জনশৃঙ্খলার মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে’। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আজ বুধবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরানের বিচার বিভাগ।
ইরনা জানিয়েছে, রিঅ্যাক্টর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ভাদির গুগল স্কলার প্রোফাইল অনুসারে, ২০১১ সালে ইরানের জ্যেষ্ঠ পারমাণবিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন তিনি, যারা পরে জুনে ‘ইসরায়েল’-এর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নিহত হন।
আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসারে, ভাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডক্টরেট স্নাতক ছিলেন। তিনি ১২ দিনের যুদ্ধে নিহত দুই বিশিষ্ট পারমাণবিক বিশেষজ্ঞ আব্দুলহামিদ মিনুচেহর এবং আহমেদ জোলফাগারির সঙ্গে একটি গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ছিলেন।
গত জুন মাসে ইরানের শীর্ষ জেনারেল ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে ‘ইসরায়েল’ ১২ দিনের বিমান হামলা চালায়। ইরান ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়। তাকে ওই হামলায় নিহত একজন বিজ্ঞানীর সম্পর্কে গোপন তথ্য মোসাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বলে বিচার বিভাগ জানায়।
সংবাদমাধ্যম মিজান জানিয়েছে, ভাদি ‘জেনেশুনে ও ইচ্ছাকৃতভাবে’ ‘ইসরায়েল’-এর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য পাচার করেছেন। কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, তাকে অনলাইনে নিয়োগ করা হয়েছিল। মোসাদের একজন কর্মকর্তা তাকে অ্যালেক্স ছদ্মনাম ব্যবহার করে যাচাই করেছিলেন এবং পরে কেভিন নামে পরিচিত একজন হ্যান্ডলারের কাছে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
বিচার বিভাগের মতে, মূল্যায়নের পর মোসাদ মনে করে যে ওয়াদির কর্মস্থল এবং তার প্রবেশাধিকারের মাত্রা তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান উৎসে পরিণত করেছে। এরপর তাকে ‘মোসাদের শীর্ষ বিভাগগুলোর একটির’ সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তার অনুরোধে, প্রতি মিশনে পুরস্কার দেওয়ার নিয়মের বদলে প্রতি মাসে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের মাধ্যমে তাকে অর্থ দেওয়া হতো।
চলতি বছর ‘ইসরায়েল’-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত ইরানিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর উল্লেখ্যযোগভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরান সরকার। ১২ দিনের যুদ্ধের পর গুপ্তচর সন্দেহে দুই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ইরান। তথ্যমতে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মৃত্যুদণ্ড বৃদ্ধির নিন্দা জানিয়েছে এবং আরও আসন্ন মৃত্যুর বিষয়ে সতর্ক করেছে। ইরান হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, জুনের সংঘাতের সময় ২১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, এর মধ্যে ‘ইসরায়েল’-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ছয়জন ব্যক্তিও ছিলেন।
এর আগে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন মোসাদ-সংশ্লিষ্ট একটি সাইবার গ্রুপের নেতৃত্ব দেওয়ায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ-আমিন মাহদাভি-শায়েস্তেহ।
অ্যামনেস্টির মতে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী রেকর্ডকৃত মৃত্যুদণ্ডের ৬৪ শতাংশের জন্য ইরান দায়ী ছিল। শুধুমাত্র ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই ৬১২টি ফাঁসি কার্যকর করেছে তেহরান।