মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০৫:২১ পিএম

‘ইসরায়েল’ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলারের নজরদারি প্রযুক্তি কিনেছিল আ.লীগ

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০৫:২১ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

গত এক দশকে প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ১৬০টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি এবং স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহার করেছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এক বছর ধরে পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে প্রস্তুত করা ৭০ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে প্রযুক্তি-ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট। 

অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সাইবার নজরদারি প্রযুক্তি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এবং গণবিক্ষোভ দমনের ক্ষেত্রে। অনুসন্ধানী প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, এসব প্রযুক্তি কেনার প্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ এবং প্রায়শই তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে ৯/১১ যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা এবং ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে বাংলাদেশে নজরদারির পরিধি বাড়ানো হয়। ফলে গত এক দশকে বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশিং কাঠামো থেকে একটি আধুনিক সাইবার-ভিত্তিক নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের আমদানি করা প্রযুক্তির তালিকায় রয়েছে আইএমএসআই ক্যাচার, ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপ্টর, সেলিব্রাইট, ফিনফিশার এবং প্রিডেটরের মতো উন্নত স্পাইওয়্যার। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিস্তৃত পরিসরে এবং অনেক ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের পরোয়ানা ছাড়াই নজরদারি চালানো সম্ভব। এই ১৯০ মিলিয়ন ডলারের ব্যয়ের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে ‘ইসরায়েলি’ উৎস থেকে আসা প্রযুক্তির জন্য, যা বিশ্বের বিভিন্ন স্বৈরাচারী সরকারও ব্যবহার করে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, র‍্যাব ও পুলিশ ওয়াই-ফাই ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ইন্টারসেপশন, সিগন্যাল জ্যামিং এবং বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি কিনেছে। অন্যদিকে, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) সেল নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ, ফোনালাপ ট্যাপ করা এবং সিগন্যাল জ্যামিংয়ের অবকাঠামো তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছে। ২০১৫ সালে সংস্থাটি সিটিজেন ল্যাব থেকে ফিনফিশার নামক একটি কম্পিউটার স্পাইওয়্যার কিনেছিল, যা ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে তথ্য চুরি করতে সক্ষম।

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কোম্পানি বাংলাদেশের কাছে নজরদারি প্রযুক্তি বিক্রি করেছে। তবে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়টি হলো, ‘ইসরায়েল’-এর সঙ্গে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সেলেব্রাইট, এনএসও গ্রুপ (পেগাসাস), ইনটেলেক্সা, কোরালকো টেক এবং ইউটিএক্স টেকনোলজিস-এর মতো ‘ইসরায়েলি’ সংস্থার তৈরি প্রযুক্তি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

এই প্রযুক্তিগুলো সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর ও হাঙ্গেরির মতো তৃতীয় দেশের মাধ্যমে কেনা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘ইসরায়েলি’ সংবাদমাধ্যম হারেৎজ-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ‘ইসরায়েল’-এর একজন সাবেক গোয়েন্দা কমান্ডারের পরিচালিত ‘প্যাসিটোরা’ নামক একটি সাইপ্রাস-নিবন্ধিত কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ তৎকালীন সরকার নজরদারির সরঞ্জাম কিনেছে।

এ ছাড়াও, তুরস্কের স্পাইওয়্যার ফার্ম বিলগি টেকনোলজি টাসারিম (বিটিটি)-ও বাংলাদেশে নজরদারি সরঞ্জাম বিক্রি করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

টেকনোগ্লোবাল ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থার এই বিস্তারের পেছনে আইনি দুর্বলতা একটি বড় কারণ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১, টেলিগ্রাফ আইন, ১৮৮৫ এবং ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইন, ১৯৩৩-এর মতো পুরোনো আইনগুলোকে ব্যবহার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যাপক নজরদারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের সংসদীয় তদারকি, বিচারিক সম্পৃক্ততা বা জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই, যার ফলে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা জনগণের সুরক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও ভিন্নমত দমনের একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নজরদারি প্রযুক্তি কেনার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা রাজনৈতিক ও নাগরিক আন্দোলন দমনে এগুলোর ব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত করে। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেও র‍্যাবকে জনসমাবেশ ও বিক্ষোভে ব্যবহারের জন্য মোবাইল ইন্টারসেপশন ডিভাইস কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এই পদ্ধতিগত সংকট নিরসনে প্রতিবেদনে জরুরি ভিত্তিতে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। সতর্ক করে বলা হয়েছে, যদি এই ধরনের সংস্কার না করা হয়, তবে বাংলাদেশে একটি ডিজিটাল স্বৈরাচারী শাসনের মডেল আরও শক্তিশালী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যেখানে নজরদারি জনগণের নিরাপত্তা বা স্বার্থের পরিবর্তে রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহৃত হবে।

Shera Lather
Link copied!