সাত দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা জামায়াতসহ আট দলের

পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আটটি রাজনৈতিক দল নতুন সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা ও সমাবেশের আয়োজন করবে। কর্মসূচি ৩০ নভেম্বর রংপুর শহরে শুরু হয়ে ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে শেষ হবে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পুরানা পল্টনে আন্দোলনরত আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ এবং উপস্থিত ছিলেন যুগপৎ আন্দোলনের আট দলের শীর্ষ নেতারা।

মাওলানা ইউসুফ আশরাফ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চালাচ্ছি। যদিও সরকার ইতোমধ্যেই জুলাই সনদকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি গণভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। আমরা চাই, এই গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বিজয়ী হোক, যাতে ফ্যাসিবাদ পুনরায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে না।’

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে : গোলাম পরওয়ার

বিস্তারিত পড়ুন

তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনের অন্যতম দাবি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে পল্লবীতে বিএনপির (যুবদল) এক নেতার হত্যাকাণ্ড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।’

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মাওলানা আশরাফ বলেন, ‘সন্ত্রাসী ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের যথাযথভাবে দায়িত্বে নিয়োগ দিতে হবে যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়।’

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে একটি হলো ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিষিদ্ধকরণ। মাওলানা আশরাফ উল্লেখ করেন, ‘এটি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, এবং আমরা চাই, শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই দাবি পূর্ণ হবে।’

আলেমদের বিরুদ্ধে অশোভন মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন : শফিকুর রহমান

বিস্তারিত পড়ুন

তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

পিআর (প্রপারশনাল রেপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচন। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে ভিন্নভাবে পিআর প্রয়োগের প্রস্তাব আসলেও ইতোমধ্যেই জুলাই আদেশের মাধ্যমে উচ্চকক্ষে পিআর ঘোষণা করা হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আলাদা সময়ে আয়োজন। সরকার একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আন্দোলনকারীরা সমর্থন করেননি।

মাওলানা আশরাফ বলেন, “আমাদের পাঁচ দফা দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। যদি গণভোটে জুলাই সনদ জয়যুক্ত না হয়, তবে জুলাই সনদ বাতিল হবে এবং নতুন ফ্যাসিবাদ পুনরায় উত্থান করবে।

আজহারীর প্রার্থিতার বিষয়ে যা জানাল জামায়াত

বিস্তারিত পড়ুন

সাত দিনের কর্মসূচির সময়সূচি ও স্থান:

• ৩০ নভেম্বর: রংপুর
• ১ ডিসেম্বর: রাজশাহী
• ২ ডিসেম্বর: খুলনা
• ৩ ডিসেম্বর: বরিশাল
• ৪ ডিসেম্বর: ময়মনসিংহ
• ৫ ডিসেম্বর: সিলেট
• ৬ ডিসেম্বর: চট্টগ্রাম

প্রতিটি শহরে সমাবেশ আয়োজনের জন্য বিভাগীয় লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে। মাওলানা আশরাফ বলেন, ‘এই সমাবেশে আট দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখবেন, জনগণকে সচেতন করবেন এবং দুর্নীতি ও দখলবাজমুক্ত সরকার গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, আন্দোলনের পরিধি সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা চলমান।

অন্য দলের অংশগ্রহণও সম্ভব, তবে এটি মূলত ফ্যাসিবাদ বিরোধী ও দেশপ্রেমিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘যারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং সংস্কারপন্থার প্রতি আস্থাশীল, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভব। কিন্তু যারা সংস্কারের বিরোধিতা করে, তাদের সঙ্গে ঐক্যের সুযোগ নেই।’