গাজা সিটিতে অভিযান জোরদার করেছে ‘ইসরায়েলি’ বাহিনী। শুক্রবার শহরের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ১২ তলা মুস্তাহা টাওয়ারে হামলা চালিয়ে ভবনটি ধ্বংস করেছে তারা। এর আগে বাসিন্দাদের ভবন খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ইসরায়েলের দাবি, ভবনটি ‘হামাসের অবকাঠামো’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
হামলার আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সামাজিক মাধ্যমে জানান, গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান তীব্র হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘নরকের দরজা এখন খুলছে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে অস্ত্র ত্যাগ করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বন্ধ হবে না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে দুটি হামলার মাধ্যমে ১২ তলা ভবনটি ধ্বংস করা হয়। তবে ভবন কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, এখানে কেবল বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো অবস্থান করছিল। হামলায় বহু সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের আল-শিফা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হামলার অভিঘাতে আশপাশের শত শত অস্থায়ী তাঁবুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের হামলা আসন্ন স্থল অভিযানের প্রস্তুতি এবং একই সঙ্গে বেসামরিক জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশল।
এদিকে গাজার আরেকটি পাঁচতলা ভবনও খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ভবনটি একটি গ্যাস স্টেশন ও ওয়াইএমসিএ ভবনের কাছে অবস্থিত। স্থানীয়রা বলছেন, তাদের খুব অল্প সময়ের মধ্যে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন দাবি করেন, বর্তমানে গাজা সিটির ৪০ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা হামাসের অবকাঠামো ধ্বংস করছি এবং অভিযান আরও বিস্তৃত ও তীব্র হবে।’
ক্রমবর্ধমান হামলার কারণে অনেক ফিলিস্তিনি দক্ষিণাঞ্চলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার কোনো এলাকাই নিরাপদ নয়, এমনকি তথাকথিত মানবিক করিডোরও নয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৪ হাজার ২৩১ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৩ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হন ১ হাজার ১৩৯ জন এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।
শুক্রবার হামাস এক ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় ২০২৩ সালের অক্টোবরের সংগীত উৎসব থেকে অপহৃত দুই ইসরায়েলি নাগরিককে—গাই গিলবোয়া-দালাল ও আলন ওহেল। ভিডিওতে ক্লান্ত গিলবোয়া-দালাল জানান, তিনি গাজা সিটিতে আরও কয়েকজন বন্দির সঙ্গে আটক রয়েছেন এবং ইসরায়েলি অভিযানে প্রাণ হারানোর ভয় পাচ্ছেন।
ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েলি বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানান। এদিকে ইসরায়েলে হাজারো মানুষ সাপ্তাহিক বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধ বন্ধ করে বন্দিদের মুক্তির দাবিতে।
এখন পর্যন্ত যারা মুক্তি পেয়েছেন, তারা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছেন। তবে সর্বশেষ জুলাইয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। হামাস আংশিক বন্দিমুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সব বন্দিমুক্তি ও হামাসের আত্মসমর্পণের শর্তে অটল রয়েছেন।