ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

টিকটকের কল্যাণে ৩৬ বছর বয়সেই বিলিয়নিয়ার হুন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ০২:১৮ পিএম
কিম বিয়ং হুন। ছবি- সংগৃহীত

মাত্র ১৫ সেকেন্ডের একটি টিকটক ভিডিও বদলে দেয় এক স্টার্টআপের ভাগ্য। একটি রুপালি, মসৃণ ডিভাইস মুখে বসিয়ে ক্লিপটি পোস্ট করেনমার্কিন মডেল কাইলি জেনার। দাবি করেন, এটি ত্বকে সিরাম আরও ভালোভাবে শোষণ করতে সাহায্য করে। ‘বুস্টার প্রো’ নামের গ্যাজেটটির ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়, আর সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় আসে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান—এপিআর করপোরেশন। এক সময় অচেনা একটি সিউলভিত্তিক স্টার্টআপ থাকলেও, এখন কোরিয়ার বিউটি টেক ইন্ডাস্ট্রির কেন্দ্রবিন্দু এ প্রতিষ্ঠান।

এই সাফল্যের পেছনে রয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী কিম বিয়ং হুন। এক সময় প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও, এখন তিনি বিউটি মোগল হিসেবে পরিচিত। এপিআর-এর ৩১ শতাংশ শেয়ারের মালিক কিম—যার বাজারমূল্য এখন প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বেড়েছে ২০০ শতাংশ, যা তাকে দক্ষিণ কোরিয়ার কনিষ্ঠতম বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেছে—ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী।

উদ্যোক্তা কিমের এই যাত্রা শুরু হয় এক দশকের বেশি আগে, যখন তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়তে যান। সেখানে থেকেই ডেটিং অ্যাপসহ বেশ কিছু মোবাইল অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেন। স্মার্টফোনের বিকাশ এবং সম্ভাবনা তাকে প্রযুক্তিপ্রেমী উদ্যোক্তা থেকে কোরিয়ান বিউটি জগতের একজন প্রভাবশালী খেলোয়াড়ে পরিণত করে।

২০১৪ সালে কিম এপিআর চালু করে স্কিন কেয়ারের (ত্বকের যত্ন) দিকে মনোনিবেশ করেন। প্রাথমিকভাবে প্রসাধনী পণ্যের ওপর জোর দেন। ২০২১ সালে, ব্যবসাটি উচ্চ-প্রযুক্তি সম্পন্ন ফেসিয়াল ডিভাইস উৎপাদন শুরু করে। বাড়িতেই স্পা-এর মতো যত্নের প্রতিশ্রুতি দেয় কোম্পানি।

এপিআর-এর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা শিন জে হা ব্লুমবার্গ নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এটি এমন কোম্পানি যেটির পণ্যগুলো কিম ব্যক্তিগতভাবে প্রচার করেন। তিনি প্রতিদিন ৩০ মিনিট ধরে এপিআর-এর ফেসিয়াল গ্যাজেট ব্যবহার করেন।

গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর, এপিআর এখন দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিউটি ফার্ম। এটির বাজার মূলধন ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

এক সময় চীন-নির্ভর ব্র্যান্ডগুলো যেখানে ডিউটি-ফ্রি শপে সীমিত ছিল, এপিআর টিকটকে প্রচারিত স্কিনকেয়ার ও বিউটি ডিভাইস দিয়ে মার্কিন বাজারে স্থান করে নেয়। হানা সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ইউন-জুং পার্ক জানান, ডিজিটাল বিপণনে দক্ষ কে-বিউটি কোম্পানিগুলো দ্রুত ই-কমার্সে এগিয়ে যাচ্ছে।

চীন এখনো দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হলেও যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। এপিআর-এর ৭০ শতাংশের বেশি আয় এখন বিদেশ থেকে, যার বড় অংশ মার্কিন বাজার থেকে আসে।

বর্তমানে কোম্পানিটি অ্যান্টি-এজিং, ময়েশ্চারাইজিং ও ব্রাইটেনিং পণ্যে জোর দিচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। লক্ষ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ষিক রাজস্ব ১ ট্রিলিয়ন ওন (৭৩০ মিলিয়ন ডলার) ছাড়ানো।

ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় এসেছেন এপিআর-এর প্রধান নির্বাহী কিমও। সম্প্রতি তিনি সিউলের অভিজাত এলাকা সেওংসু-ডং-এ ২১ মিলিয়ন ডলারে একটি পেন্টহাউস কিনেছেন। বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েও কিম প্রতিদিন অফিসে আসেন, বাজার পর্যবেক্ষণ করেন এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকে অংশ নেন।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য এমন একটি বিউটি কোম্পানি তৈরি করা, যা অ্যাপলের মতো সবার কাছে পরিচিত হবে। আমরা এমন উদ্ভাবনী পণ্য আনতে চাই, যা আমাদের শিল্পকে নেতৃত্ব দেবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি।