ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের এক বহুদলীয় প্রতিনিধিদল ভারত-পাকিস্তান সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। সরকারি গণমাধ্যম রেডিও পাকিস্তান এ তথ্য জানিয়েছে।
পাকিস্তান সাম্প্রতিক ভারত-পাক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন এবং নয়াদিল্লির ক্রমবর্ধমান লবিং কার্যক্রম মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে। এ প্রচারণার অংশ হিসেবে বিলাওয়ালের দল লন্ডন ও ব্রাসেলসেও সফর করবে।
প্রতিনিধিদলে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো, হিনা রব্বানি খার, খুররম দস্তগীর, সিনেটর শেরি রেহমান, মুসাদ্দিক মালিক, ফয়সাল সাবজওয়ারি, বুশরা আনজুম বাট এবং জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জালিল আব্বাস জিলানি ও তেহমিনা জানজুয়া।
ক্যাপিটাল হিলে বৈঠকগুলোতে প্রতিনিধিদলটি জাতিসংঘের অসমাপ্ত এজেন্ডা হিসেবে কাশ্মীর ইস্যুতে দ্রুত সংলাপ শুরুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। তারা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ও ইন্ডাস ওয়াটারস চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার ওপর জোর দেন।
বিলাওয়াল বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই শান্তি নিশ্চিত করতে হলে একমাত্র পথ হলো সংলাপ, আত্মসংযম ও কাশ্মীর সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান।’ তিনি ভারতের একতরফা আগ্রাসী কর্মকাণ্ড, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং ইন্ডাস ওয়াটারস চুক্তি স্থগিত করার মতো উদ্বেগজনক সিদ্ধান্তের কথা কংগ্রেস সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়ক ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘ট্রাম্প উত্তেজনা প্রশমনে ও যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছেন।’
প্রতিনিধিদলটি এ সময় পাকিস্তানের আঞ্চলিক শান্তি, সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রয়াস এবং ভারতের সাম্প্রতিক আচরণ সম্পর্কে তাদের ‘নীতিনির্ভর অবস্থান’ পুনর্ব্যক্ত করে।
মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরাও পাকিস্তানি প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান এবং ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশকে সংযত থাকার ও শান্তির অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান। তারা পাকিস্তানের জনগণের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিলাওয়াল এক্স (সাবেক টুইটার)-এ জানান, তিনি মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন-এর সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করেন। এতে তিনি ভারতের ‘ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী মনোভাব’ এবং সংলাপে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগ ব্যক্ত করেন।
তিনি হাউস সাবকমিটি অন সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ার র্যাংকিং সদস্য কংগ্রেসওম্যান সিডনি কামলাগার-ডোভের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় তিনি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি একটি ‘নতুন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’ তৈরি করেছেন, যেখানে নামহীন হামলাকারীদের ঘটনাকে অজুহাত বানিয়ে ভারত উসকানিমূলক আগ্রাসন চালায়, যা দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ায়।’
সিনেটর জিম ব্যাংকসের সঙ্গেও বিলাওয়াল আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা করেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাকে প্রশংসা করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলের সমস্যার কোনো সামরিক সমাধান নেই। কেবল কূটনীতি ও সংলাপই দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি আনতে পারে।’
এর আগে প্রতিনিধি দলটি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দুই দিনের সফর শেষ করেছে। সেখানে তারা মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসসহ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখবাস শরিফও বুধবার দাবি করেন, পেহেলগামের ঘটনা ছিল একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’। তিনি বলেন, ‘ভারতের একতরফা আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান আত্মরক্ষায় ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। ভারতীয় হামলায় ৩৩ জন পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ধৈর্য ও সংযমের মাধ্যমে জবাব দিয়েছি। আমাদের নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাবের জবাবে ভারত আগ্রাসন চালিয়েছে।’ তিনি ভারতকে ‘বিশ্বকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখিয়ে বোঝানোর’ আহ্বান জানান।
শরিফ মার্কিন দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৯তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। ট্রাম্পকে শান্তির পক্ষে মানুষ ও ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবসায়িক চুক্তির পক্ষপাতী’ বলে অভিহিত করেন।
সূত্র : দ্য ডন