মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, ওয়াশিংটন যদি ক্যারিবীয় অঞ্চলে মোতায়েন করা বাহিনী দিয়ে আক্রমণ চালায় তাহলে নিজ দেশকে ‘সাংবিধানিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করবেন। আগ্রাসনের শিকার হলেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াবে ভেনেজুয়েলা।
ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের আটটি যুদ্ধজাহাজ এবং অন্তত ১ হাজার ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রয়েছে বলে দাবি করেছেন মাদুরো। তার অভিযোগ, এ সামরিক প্রস্তুতির মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার সরকার পতন ঘটানো।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানী কারাকাসে এক সংবাদ সম্মেলনে মাদুরো বলেন, ‘সামরিক হুমকি দেখিয়ে তারা সরকার পরিবর্তন চাইছে। ভেনেজুয়েলা গত ১০০ বছরে সবচেয়ে বড় হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। আটটি যুদ্ধজাহাজ, এক হাজার ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাবমেরিন দিয়ে দেশটিকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় উপকূলীয় অঞ্চল ও সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের আধাসামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মাদুরোর এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন সরকার ল্যাটিন আমেরিকার মাদক চোরাচালান মোকাবিলার জন্য ভেনেজুয়েলার উপকূলীয় জলসীমায় নৌবাহিনী জোরদার করছে। যদিও মার্কিন কর্তৃপক্ষ স্থল অনুপ্রবেশের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
বর্তমানে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর দুটি এজিস গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার (ইউএসএস গ্রেভলি ও ইউএসএস জেসন ডানহাম) সঙ্গে রয়েছে ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস স্যাম্পসন এবং ক্রুজার ইউএসএস লেক এরি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-কে জানান, তিনটি জাহাজে চার হাজারের বেশি নাবিক ও মেরিন মোতায়েন করা হবে।
এবিসি নিউজ প্রতিবেদনে বলাে হয়েছে, মাদুরোর সরকার প্রতিবেশী কলম্বিয়ার সীমান্তে ও ভেনেজুয়েলার উপকূলে সেনা মোতায়েন করেছে। এ ছাড়াও নাগরিকদের বেসামরিক মিলিশিয়ায় যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে। মাদুরো সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই সর্বোচ্চ সামরিক চাপের মুখে আমরা ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ঘোষণা করেছি।’ এবং মার্কিন সৈন্য মোতায়েনকে ‘অযৌক্তিক, অনৈতিক, সম্পূর্ণ অপরাধমূলক এবং রক্তাক্ত হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাদুরো উল্লেখ করেন, তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বৈধভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশ তার প্রেসিডেন্ট পদকে স্বীকৃতি দেয়নি। তিনি জানিয়েছেন, তার সরকার ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দুইভাবে যোগাযোগ বজায় রেখেছে- একটি পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে এবং অন্যটি ট্রাম্পের বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেলের মাধ্যমে। মাদুরো ভেনেজুয়েলার সরকারকে উৎখাত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা মার্কো রুবিওকে ‘যুদ্ধবাজ’ বলে অভিহিত করেছেন।
ক্যারিবীয় উপকূলীয় রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক বিরোধীরা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের নির্বাচনের পর থেকে মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের নেতা মারিয়া করিনা মাচাদো সম্প্রতি ট্রাম্প এবং রুবিওকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই পদক্ষেপকে ভেনেজুয়েলার সরকারের জন্য ‘সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তবে মাদুরো সতর্ক করে বলেছেন, মার্কিন সামরিক পদক্ষেপ ভেনেজুয়েলার জন্য ‘হাত রক্তে রঞ্জিত’ হতে পারে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসন পরিবর্তনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আপনি ভেনেজুয়েলায় পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করতে পারবেন না’।