ঢাকা রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফিলিস্তিনকে আজ ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ স্বীকৃতি দেবে ব্রিটেন

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দিতে পারেন বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালো প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। যদিও গত জুলাইয়ে স্টারমার যে তিনটি শর্ত পূরণের কথা বলেছিলেন, সেগুলোতে ইসরায়েল ব্যর্থ হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

ফিলিস্তিন স্বীকৃতির এ সিদ্ধান্ত আসছে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির তীব্র অবনতি ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও স্টারমার তার অবস্থানে অটল রয়েছেন।

স্টারমার জুলাইয়ে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগেই তিনি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবেন। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলনের আগে এই ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে স্টারমারের মতবিরোধ তৈরি হয়েছে, কারণ তারা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিরোধী।

ব্রিটিশ সরকার আশঙ্কা করছে, পশ্চিম তীরে দ্রুতগতির বসতি স্থাপন কার্যক্রম দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের যেকোনো সম্ভাবনা নষ্ট করে দিতে পারে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পশ্চিম তীরে গুরুতর সম্প্রসারণ, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং ই১ এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের মতো পদক্ষেপ দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

লেবার পার্টি জানিয়েছে, এই স্বীকৃতিকে হামাসের জন্য পুরস্কার হিসেবে দেখা যাবে না। বরং গাজার ভবিষ্যৎ শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকার সময়মতো হামাসের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করবে এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবিও চালিয়ে যাবে।

তবে পরিস্থিতি সহজ নয়। ফিলিস্তিনকে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৭টি স্বীকৃতি দিলেও, যুক্তরাজ্যের নির্ধারিত তিনটি শর্ত— যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতি, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি উদ্যোগ এবং জাতিসংঘকে সাহায্য সরবরাহ পুনরায় শুরু করার অনুমতি ইসরায়েল পূরণে অনীহা দেখাচ্ছে। ফলে এগুলো পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। স্টারমার পূর্বে বলেছিলেন, এসব শর্ত পূরণ হলে তিনি স্বীকৃতির পদক্ষেপ থেকে সরে দাঁড়াবেন।

অন্যদিকে, এখনো বন্দি থাকা জিম্মিদের কিছু পরিবারের সদস্যরা খোলা চিঠি লিখে এই ঘোষণার বিরোধিতা করেছেন। তারা মনে করেন, জাতিসংঘ অধিবেশনের আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে জিম্মিদের মুক্তি আরও জটিল হয়ে উঠবে। তাদের অভিযোগ, হামাস ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তকে বিজয় হিসেবে প্রচার করছে এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অনীহা দেখাচ্ছে। পরিবারের আবেদন, ‘আমাদের প্রিয়জনরা বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত এই পদক্ষেপ নেবেন না।’

বিরোধী দলও স্টারমারের সমালোচনায় নামছে। ছায়া পররাষ্ট্র সচিব প্রীতি প্যাটেল অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী আসলে তার ব্যাকবেঞ্চারদের চাপের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন।

ডেভিড ল্যামি এ প্রসঙ্গে বলেন, গাজায় যা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম অগ্রাধিকার জিম্মিদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা। হামাসের জন্য কোনো অবস্থান থাকতে পারে না। গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে যাতে অনাহার ও অপুষ্টি মোকাবিলায় যথেষ্ট সাহায্য পৌঁছানো যায়, আরও সাহায্যের রুট খোলা যায় এবং গাজা শহরে অব্যাহত সামরিক হামলা বন্ধ হয়।

এদিকে, গাজার সামরিক অভিযানের তীব্রতাও বাড়ছে। শনিবার রাতভর আক্রমণে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইসরায়েলের ভেতরে হাজার হাজার মানুষ জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে মিলে বিক্ষোভ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনার দাবি জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ও এর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জাতিসংঘ অধিবেশনের সময় আরও পরিষ্কার হবে। তবে এখনই স্পষ্ট যে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি, পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের গতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ—সব মিলিয়ে এই ঘোষণার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।