ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ইরান যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করলে ‘ঐতিহাসিক’ প্রতিশোধ নেবেন  ট্রাম্প

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি- সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি সংঘাতে উত্তেজনা বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। তবে ইরানে হওয়া হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করলে মার্কিন সামরিক বাহিনী এমন প্রতিশোধ নেবে যা আগে কখনো দেখা যায়নি বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

রোববার (১৫ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

তিনি আরও বলেন, ‘চাইলেই আমরা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সহজেই একটা চুক্তি করাতে পারি এবং এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি।’

এর আগে, বার্তাসংস্থা আনাদোলুকে হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, তেহরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধে প্রস্তুত হয়, তবে এখনো শান্তিপূর্ণ সমাধানের সুযোগ রয়েছে।

সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ যা ঘটছে তা আর ঠেকানো যাবে না। কিন্তু আমরা এখনো একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা ধরে রাখছি । যদি ইরান আলোচনায় আগ্রহ দেখায়।’

তিনি বলেন, ‘শান্তি অর্জনের সবচেয়ে দ্রুত পথ হলো ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি পুরোপুরি পরিত্যাগ করা।’ 

এদিকে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অভিযোগে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগ অস্বীকার করে ইরান এবং ওমানের মধ্যস্থতায় পাঁচ দফা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (১৩ জুন) ষষ্ঠ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা নিয়ে এখন অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।

ইরানে ইসরায়েলি হামলাকে ‘বিপজ্জনক এবং বেপরোয়া উত্তেজনা’ বলে নিন্দা জানিয়েছে ওমান। 

ওমান বিবৃতিতে জানায়, ‘এটি অগ্রহণযোগ্য এবং চলমান আগ্রাসী আচরণের প্রতিনিধিত্ব করে যা এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতার ভিত্তিকে ক্ষুণ্ণ করে।’

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি বলেন, দেশটির পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বাধা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই যুক্তরাষ্ট্রের। 

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন জানিই যে, তারা এই আলোচনার কোনো মর্যাদা দেবে না, তা হলে আলোচনার অর্থ কী? সুতরাং আলোচনার এই আমন্ত্রণের লক্ষ্য হচ্ছে জনমতকে প্রতারিত করা।’

অপরদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘আমাদের নীতি এখনো সর্বোচ্চ চাপ ও সামরিক হুমকির মুখে সরাসরি আলোচনায় না জড়ানো, তবে অতীতের মতো, পরোক্ষ আলোচনা চলতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শীঘ্রই আমাদের নিজস্ব প্রস্তাবিত পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার পরে ওমানের মাধ্যমে অন্য পক্ষের কাছে জমা দেব।

এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা নূর নিউজের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

এদিকে, এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ইহুদিবাদী সরকার আমাদের প্রিয় দেশের বুকে তার রক্তাক্ত ও কলুষিত হাত বিস্তার করেছে, আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে আগের থেকেও স্পষ্টভাবে তার বর্বর স্বভাব প্রকাশ করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

তিনি বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইহুদিবাদীরা নিজেদের জন্য এক তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি ডেকে এনেছে এবং তা তাদের ভোগ করতেই হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শত্রুর এই আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। তবে ইনশাআল্লাহ, তাদের স্থলাভিষিক্তরা দ্রুতই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়ে কাজ শুরু করবেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী আল্লাহর ইচ্ছায় ইসরায়েলের মতো শত্রুদের কখনো ছাড় দেবে না।’

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর পূর্ব প্রতিরোধমূলক হামলার পর, ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা অবধারিত।’

এদিকে, ইসরায়েলের হামলা ‘চমৎকার’ ও ‘অত্যন্ত সফল’ বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা সব জানতাম। আমি ইরানকে অপমান ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। আমি খুব চেষ্টা করেছি। কারণ, আমি চাইতাম, একটা চুক্তি হোক। আমি ইরানকে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলাম, আজ ৬১তম দিন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে হামলা পিছিয়ে দিতে বলেছিলাম। আমি চেয়েছি কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি (ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সংকট) সমাধান হোক। 

যদিও আলোচনায় ব্যর্থ হলে ইরানকে হামলার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থাকবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইসরায়েলকে সমর্থন করেন। তবে এ হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।