ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

কেন নিজেকে নোবেলের জন্য যোগ্য মনে করেন ট্রাম্প?

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ১০:১৫ এএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি- সংগৃহীত

সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ভূমিকা রাখায় ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ করেছে পাকিস্তান। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, লিবারেল না বলে চার-পাঁচবার নোবেল পাওয়ার যোগ্য হয়েও আমাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে না। 

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-আরব সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংলাপ এবং আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারসহ একাধিক আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগকে নিজের ‘শান্তির পদক্ষেপ’ হিসেবে তুলে ধরে ট্রাম্প প্রশ্ন তুলেছেন অন্যরা পেল, আমি কেন নয়?

তিনি বলেন, ওবামা কিছু না করেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নোবেল পেয়ে যান। আর আমি বাস্তব শান্তিচুক্তি করেও কিছু পাই না?

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে কেন নিজেকে নোবেলের জন্য যোগ্য মনে করছেন মার্কিন প্রেসিডন্ট?

আবরাহাম অ্যাকর্ডস: ট্রাম্পের কূটনৈতিক কার্ড

২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রশাসন মধ্যস্থতা করে ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করায়। যা ‘আবরাহাম অ্যাকর্ডস’ নামে পরিচিত। সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কোর মতো দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। ট্রাম্প একে “শান্তির যুগের সূচনা” হিসেবে অভিহিত করেন।

কিম জং-উনের সঙ্গে বৈঠক

২০১৮ ও ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে বৈঠক করে ট্রাম্প ইতিহাস গড়েন। এই বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি না হলেও, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংলাপ শুরু হয়। ট্রাম্পের দাবি—এটি বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক উত্তেজনা কমাতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার

যদিও বাইডেন প্রশাসনের অধীনে চূড়ান্ত সেনা প্রত্যাহার ঘটে, এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ট্রাম্প। ২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, আমার পরিকল্পনা অনুসরণ করা হলে এই প্রত্যাহার আরও সম্মানজনক ও স্থিতিশীল হতো।

মনোনয়ন ছিল, পুরস্কার নয়

২০২০ সালে ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন  নরওয়ের একজন সংসদ সদস্য। তবে নোবেল কমিটি তাকে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের উদ্যোগগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সেগুলোর অনেকগুলোরই টেকসই প্রভাব এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

কেন নোবেল দাবি করছেন তিনি? 

ট্রাম্পের নোবেল দাবির পেছনে রয়েছে একধরনের রাজনৈতিক প্রচারণা কৌশলও। সমর্থকদের কাছে নিজেকে ‘বিশ্ব শান্তির রক্ষাকর্তা’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছেন তিনি। তবে নিন্দুকরা বলছেন, মুসলিম নিষেধাজ্ঞা, ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও বর্ণবাদী মন্তব্য—সবই তাকে এই পুরস্কারের নৈতিক যোগ্যতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

কিন্তু বাস্তবতা কী বলছে?

নোবেল শান্তি পুরস্কারের মানদণ্ড শুধু কোনো উদ্যোগ নিলেই পূরণ হয় না। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, টেকসই শান্তি ও মানবিক অগ্রগতি এতে বিবেচিত হয়। আবরাহাম চুক্তি বাস্তবায়নে অনেক জটিলতা রয়ে গেছে, আর উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কেও পুনরায় উত্তেজনা ফিরে এসেছে। ফলে নোবেলের বিচারকদের দৃষ্টিকোণে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড হয়তো তাৎক্ষণিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হলেও ‘টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার’ উপযুক্ত উদাহরণ নয়।