ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই, ২০২৫

ট্রাম্পের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে মৃত্যুঝুঁকিতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৫, ১০:৩০ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবার ক্ষমতায় ফিরে নেওয়া তার এক সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী বিপদের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বহির্বিশ্বে উন্নয়ন সহায়তা (ইউএসএআইডি) কার্যক্রম ৮৩ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, যার মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশই শিশু।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা গবেষণা সাময়িকী ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৩৩টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা গেছে, ওই সময়ের মধ্যে ইউএসএআইডির সহায়তায় প্রায় ৯১ লাখ মানুষের মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছিল।

গবেষণার প্রধান লেখক দাভিদ রাসেলা জানান, ‘এই সহায়তা বন্ধের প্রভাব শুধু স্বাস্থ্য খাতে সীমাবদ্ধ নয়। এর ফলে সমাজে রোগের বিস্তার, শিশুদের অপুষ্টি, এমনকি সংঘাত ও অস্থিতিশীলতাও বাড়তে পারে।’

গবেষণার সহ-লেখক জেমস মাসিনকো বলেন, একজন মার্কিন নাগরিক বছরে গড়ে মাত্র ৬৪ ডলার অনুদান দিয়ে থাকেন ইউএসএআইডিতে। এই ক্ষুদ্র অনুদানগুলোই বিশ্বের নানা দেশে অসংখ্য প্রাণ বাঁচানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সহায়তা হ্রাস পেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো, যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভাব, অপুষ্টি ও রোগব্যাধি আগেই প্রকট। যেসব দেশে ইউএসএআইডির প্রকল্প চালু ছিল, সেসব এলাকায় এইচআইভি বা এইডস সংক্রান্ত মৃত্যুর হার ৬৫ শতাংশ কম দেখা গেছে। ম্যালেরিয়া, কলেরা, যক্ষ্মা কিংবা অপুষ্টিজনিত মৃত্যুও লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।

বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ, মহামারি কিংবা যুদ্ধকালীন সময়েও ইউএসএআইডি দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী নতুন করে এক গভীর সংকটের মুখে পড়ছে।

এই গবেষণার তথ্য প্রকাশিত হয় সেই সময়, যখন স্পেনে জাতিসংঘের সম্মেলনে বিশ্ব ও ব্যবসায়িক নেতারা বৈশ্বিক মানবিক সংকট নিয়ে আলোচনায় মিলিত হয়েছেন। গবেষকরা মনে করেন, এই তথ্য প্রকাশ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সহায়ক হবে এবং মানবিক সহায়তা পুনরায় চালুর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে চাপ সৃষ্টির পথ প্রশস্ত করবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, বিদেশে মার্কিন সহায়তা কার্যক্রম নাটকীয়ভাবে হ্রাস করা হবে। এর ফলে ইউএসএআইডি, যা আগে বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তার ৪০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করত, তা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে।

এই সিদ্ধান্তের কারণে শুধু যে চিকিৎসা সেবার অভাব হবে, তা নয় বরং এর সঙ্গে বাড়বে দারিদ্র্য, অস্থিরতা এবং উন্নয়ন স্থবিরতা।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের প্রভাব বহুমুখী। এটি শুধু মৃত্যুহারই বাড়াবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে তা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের পথেও বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্বব্যাপী মানবিক সহযোগিতা ও সংহতির যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন এই সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়া এক ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স