আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে তদন্ত শুরু করায় যুক্তরাষ্ট্র এ সপ্তাহেই সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে। এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে আইসিসি’র দৈনন্দিন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সংবাদমাধ্যম দ্য জাপান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটন ইতোমধ্যেই এ আদালতের কয়েকজন প্রসিকিউটর ও বিচারকের ওপর বিভিন্নভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে পুরো প্রতিষ্ঠানটিকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে সেটি হবে বড় ধরনের পদক্ষেপ।
কূটনৈতিক সংবেদনশীল এই ইস্যুতে সরাসরি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছয়টি সূত্র জানিয়েছে, আইসিসির বিরুদ্ধে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সিদ্ধান্ত খুব শিগগিরই নেওয়া হতে পারে।
-20250923115840.webp)
একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্ভাব্য সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মোকাবিলায় আইসিসি জরুরি বৈঠক করেছে। আরও দুটি সূত্র জানায়, আদালতের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গেও এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা গোপনীয়তার শর্তে নিশ্চিত করেছেন, আদালতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব বিবেচনাধীন, যদিও সময়সূচি নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র আইসিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, আদালত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের ওপর তার ‘কথিত এখতিয়ার’ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। মুখপাত্র বলেন, ‘আদালতের এখনই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কাঠামোগত পরিবর্তন আনার মাধ্যমে পথ পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। যতদিন আইসিসি আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করবে, ততদিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সাহসী সেনাসদস্যসহ অন্যদের সুরক্ষায় অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেবে।’
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে আদালতের কর্মচারীদের বেতন প্রদান, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকারের মতো মৌলিক কার্যক্রমও ব্যাহত হতে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আদালতের কর্মীরা ২০২৫ সালের বাকি সময়ের বেতন অগ্রিম পেয়েছেন বলে তিনটি সূত্র জানিয়েছে। এ ধরনের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ আদালতের জন্য নতুন নয়।
এ ছাড়া আদালত বিকল্প ব্যাংকিং সেবা ও সফটওয়্যার সরবরাহকারীর খোঁজ করছে। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগভিত্তিক এই আদালত ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। হামাস নেতাদের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে।
তিনটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আইসিসির ১২৫ সদস্য রাষ্ট্রের কিছু দেশ এই সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে দ্য হেগ ও নিউইয়র্কভিত্তিক চারটি কূটনৈতিক সূত্রের মতে, যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ আরও বাড়াবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আইসিসিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আদালতের এখতিয়ার গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মামলার ওপর। তবে শর্ত হলো—অপরাধ কোনো সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিক কর্তৃক সংঘটিত হতে হবে অথবা সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে সংঘটিত হতে হবে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়। কিন্তু ফিলিস্তিনকে সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় আদালত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধের ওপর এখতিয়ার দাবি করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউস আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তিনি নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেছিলেন। তবে বর্তমানে যৌন হয়রানির অভিযোগে তদন্ত চলায় তিনি ছুটিতে আছেন। যদিও এই অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
-20250923142350.webp)
-20250917232525.webp)
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন