ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাজেট নিয়ে মতবিরোধ, ফের অচলাবস্থার ঝুঁকিতে মার্কিন সরকার

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
হোয়াইট হাউস। ছবি- সংগৃহীত

আবারও অচলাবস্থার মুখে দাঁড়িয়ে মার্কিন সরকার। কারণ বাজেট নিয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি কংগ্রেস। ২০২৬ অর্থবছর শুরু হওয়ার একদিন আগে এই অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রতিনিধি পরিষদ একটি বাজেট বিল অনুমোদন করে। সেটি ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ফেডারেল সরকারের জন্য তহবিল যোগাত। কিন্তু সিনেট রিপাবলিকান সদস্যরা বিলটি আটকে দেন।

২০২৫ অর্থবছর বুধবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। কিন্তু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা নতুন বাজেট নিয়ে একমত হতে পারছেন না। সোমবার কংগ্রেসের নেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি হননি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু

ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি বাড়ানো ও মেডিকেড কর্তন বাতিলের দাবি জানায়। রিপাবলিকানরা তা মানেনি। তাদের মতে, এতে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া আরও কঠিন হবে। আপস করতে অনাগ্রহী রিপাবলিকানদের দিকে আঙুল তুলেছেন ডেমোক্র্যাটরা।

বৈঠকের পর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, আমেরিকা অচলাবস্থার দিকে এগোচ্ছে। ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেছেন তিনি। অন্যদিকে সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেন, বন্ধ হবে কি না তা নির্ভর করছে রিপাবলিকানদের ওপর।

কংগ্রেসের উভয় কক্ষে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সিনেটে ৬০ ভোটের ঘাটতি আছে। বিধায় বাজেট বিল আটকে গেছে। এর ফলে ২০১৯ সালের পর প্রথমবার ফেডারেল সরকার বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

আইন অনুযায়ী, বাজেট অনুমোদন না হলে অস্থায়ী বাজেট কার্যকর করতে হয়। কিন্তু সেটিও আটকে গেলে সরকারি সংস্থাগুলো ব্যয় অনুমোদন হারায়। কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত হয়। এতে মার্কিন জীবনের বহু ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটবে।

ফেডারেল কর্মীরা বেতন পাবেন না। কেউ বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাবেন। প্রতিটি সংস্থার আলাদা শাটডাউন পরিকল্পনা আছে। তাতে নির্ধারিত হয় কোন কাজ চলবে আর কোনটি বন্ধ হবে।

পূর্ববর্তী শাটডাউনে সীমান্ত নিরাপত্তা, হাসপাতাল সেবা, বিমান নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বিদ্যুৎ সরবরাহকে অপরিহার্য ধরা হয়েছিল। সামাজিক নিরাপত্তা, মেডিকেয়ার ও মেডিকেড সুবিধা অব্যাহত ছিল। কিন্তু পরিবেশ ও খাদ্য পরিদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। কারখানা পরিদর্শন স্থগিত হয়।

জাতীয় উদ্যানগুলো বন্ধ হতে পারে। বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক ও নিরাপত্তা কর্মীদের বেতন ছাড়া কাজ করায় বিলম্ব ও ফ্লাইট বাতিলের সম্ভাবনা থাকে। শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, শাটডাউনের সময় অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। ফলে শুক্রবারের অ-কৃষি বেতনের তথ্যও আসবে না।

১৯৮১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯টি শাটডাউন হয়েছে। বেশিরভাগই তিন দিনের মধ্যে শেষ। তবে কিছু দীর্ঘ শাটডাউন ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। ১৯৯৫-৯৬ সালে ক্লিনটন প্রশাসনের সময়ে ২৬ দিনের অচলাবস্থা হয়েছিল। বারাক এইচ ওবামা প্রশাসনে হয়েছিল ১৬ দিনের শাটডাউন।

সবচেয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থা হয়েছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৩৫ দিন স্থায়ী হয়েছিল। সেটিই ছিল মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম।

কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও) জানায়, ২০১৮–১৯ সালের শাটডাউন জিডিপিতে ১১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করে। এর মধ্যে ৩ বিলিয়ন কখনো উদ্ধার সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ শাটডাউনে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সিদ্ধান্তও প্রভাবিত হয়। কারণ ফেডারেল পারমিট, ঋণ বা সার্টিফিকেশন দেওয়া সম্ভব হয় না।

২০১৯ সালের সিনেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের শাটডাউনে মার্কিন করদাতাদের ৪ বিলিয়ন ডলার অপচয় হয়েছে।

শাটডাউনে ফেডারেল কর্মী ও ঠিকাদারদের বেতন বন্ধ হয়। তবে এটি সার্বভৌম ঋণ খেলাপির মতো নয়। খেলাপিতে সরকার ঋণদাতাদের অর্থ ফেরাতে পারে না। তাতে ঋণ সুদ ও মার্কিন বন্ডের অর্থপ্রদান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

সরকারি বন্ধ কেবল বিঘ্ন ঘটালেও ঋণ খেলাপি হলে পরিণতি ভয়াবহ হয়। এতে বাজার অস্থিতিশীল হয়। ঋণ গ্রহণ ব্যয় বাড়ে। দেশ রেটিং হারায়।