মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৯:০৪ এএম

সৌদি যুবরাজের যুক্তরাষ্ট্র সফর

পারমাণবিক অস্ত্রসহ ট্রাম্পের কাছে আর কী কী চাইতে পারেন

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৯:০৪ এএম

ট্রাম্পের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ। ছবি- সংগৃহীত

ট্রাম্পের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ। ছবি- সংগৃহীত

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন একটি প্রতিরক্ষাচুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতারের সঙ্গে হওয়া চুক্তিকে ছাপিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তিনি চাইছেন এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) চিপস ও এআইচালিত ড্রোন এবং সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের মোতায়েন।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার মুখে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ রয়েছে, তবে তিনি সেটা ভালোভাবেই সামলে যাচ্ছেন। গত গ্রীষ্মে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সংঘাত থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন তিনি। এমনকি এই অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে তিনি শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই চাহিদার ফর্দ তাঁর আত্মবিশ্বাসী মনোভাবেরই প্রকাশ।

সৌদি যুবরাজের বিপরীত পক্ষে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি তাঁর দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ পারমাণবিক ও এআই প্রযুক্তি আলোচনার টেবিলে রাখতে প্রস্তুত।

সৌদি যুবরাজের এই সফরের সাফল্য নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি মৌলিক মনোভাবের ওপর। সেটি হচ্ছে চীন নিয়ে মার্কিন নিরাপত্তাব্যবস্থার উদ্বেগ। তারপরও মার্কিন প্রযুক্তি সুরক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের হাতে গোনা যে কয়টি প্রধান অর্থনীতির দেশ আছে, তাদের কারও কারও কাছে বড় অঙ্কের প্রযুক্তি বিক্রি নিশ্চিত করা। অনেক দেশের বাজেটে টানাটানি চললেও সৌদি আরবের কাছে বড় ধরনের খরচ করার মতো অর্থ রয়েছে।

এমন একটা সময় ছিল, যখন মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা মূলত বোয়িং ও লকহিড মার্টিনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা সচল রাখার চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে হোয়াইট হাউসে আসতেন। অস্ত্রব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্বকোষের মতো জ্ঞান রাখা ইরানের শাহ এ ধরনের সফরের জন্য কুখ্যাত ছিলেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোহাম্মদ বিন সালমানের এই অত্যাধুনিক কেনাকাটার তালিকা প্রমাণ করে যে তিনি তাঁর দেশকে অনেক বেশি পরিণত ও ভবিষ্যৎমুখী হিসেবে দেখছেন।

এডেলম্যান পাবলিক অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রেসিডেন্ট আয়হাম কামেল মিডল ইস্ট আইকে বলেন, এমবিএস কোনো নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা খুঁজছেন না; বরং যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে শক্তিশালী করতে চাইছেন। এটি প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের একটি দ্বিমুখী প্রবাহ।

কামেল যোগ করেন, সৌদি আরব এখন বহুকেন্দ্রিক এক বিশ্বব্যবস্থার অংশ হতে চায়। তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতার সুবিধা নিতে তারা কৌশলগতভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছে।

পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রতিরক্ষাচুক্তি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষণীয় বিষয় হলো সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সুরক্ষার আওতায় আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার কয়েক দিন পরই সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষাচুক্তি স্বাক্ষর করে।

ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে। এই চুক্তির পর সৌদি ও পাকিস্তান দুই দেশই বলেছে, এতে সব সামরিক বিকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের পারমাণবিক আলোচনায় কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে। তবে একজন সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, সৌদি আরবে সুরক্ষা বাড়িয়ে দেওয়ার একটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই আলোচনা তাদের (সৌদি আরব) পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতা থেকে টেনে বের করে আনবে। কাতারের চেয়ে সৌদি আরবের জন্য ভালো কিছু হবে।’

সাবেক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার মনে হয়, আগামী সপ্তাহে আলোচনায় এমন কিছু দেখা যেতে পারে, যা সৌদি আরবকে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করার ইঙ্গিত দিতে পারে।’

এর আগে মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন কাতারে ইসরায়েলের হামলার অনুমোদন দিয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের পুরোনো ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।

তবে সৌদি আরবের জন্য সেই ভাবমূর্তি দুর্বল হতে শুরু করে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে। ওই সময় সৌদি আরবের আরামকো তেল স্থাপনায় ইরান হামলা চালিয়েছিল। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের প্রশাসন তখন তেহরান বা তার মিত্র হুথি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে রাজি হয়নি। সৌদি আরব তখন হুথিদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল।

রিয়াদে অবস্থিত সৌদি প্রতিরক্ষা–বিশ্লেষক হেশাম আলঘান্নাম গত বুধবার ওয়াশিংটনে আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, সৌদি আরবের কাছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের স্মৃতি এখনো বড় হয়ে আছে।

ইসরায়েলি হামলার পরে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টার অংশ হিসেবে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে কাতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উপসাগরীয় এই দেশের ওপর কোনো হামলা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের ‘শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তবে ওয়াশিংটন বা উপসাগরীয় অঞ্চলের খুব কম কর্মকর্তাই যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিশ্রুতির ওপর খুব একটা আস্থা রাখেন। এটি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির প্রতিশ্রুতির মতো নয়। কারণ, নির্বাহী আদেশ যেকোনো সময় প্রত্যাহার করা যেতে পারে এবং নতুন সরকার এটি না–ও মানতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরব কংগ্রেসে অনুমোদিত কিছু শক্তিশালী আশ্বাস চাইছে। অবশ্য তারা জানে, সিনেট অনুমোদিত কোনো পূর্ণাঙ্গ চুক্তি তারা পাবে না।

আলঘান্নাম আরও বলেন, রিয়াদ প্রতীকী কোনো সুরক্ষা চাইছে না। তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য ও সুস্পষ্ট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চায়; কোনো কার্যপরিকল্পনা ছাড়া শুধু সমঝোতা স্মারক নয়। তারা এখন আংশিকভাবে যে প্রস্তাব পাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কিছু চায়।

সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসাদ আল-আইবান সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করতে এই সপ্তাহের শুরুতে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুবরাজ ওয়াশিংটনে অবতরণ করার আগেই তাঁর সফরের একটি সাফল্য হচ্ছে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলোকে আলোচনার টেবিল থেকে বাদ দিতে সক্ষম হয়েছে সৌদি আরব।

একসময় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে সিনেট অনুমোদিত প্রতিরক্ষাচুক্তির আলোচনা চলছিল।

মিডল ইস্ট আই প্রথম প্রকাশ করেছিল, গত মে মাসে ট্রাম্প সৌদি আরব সফর শুরুর আগেই রিয়াদ আলোচনার বিষয়বস্তু আগে থেকেই নির্ধারণ করে নিয়েছিল, যাতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে না থাকে।

গাজায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চললেও এবং ট্রাম্প বছরের শেষ নাগাদ ইসরায়েলের সঙ্গে রিয়াদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে দাবি করলেও পশ্চিমা ও আরব কূটনীতিকেরা বলছেন, সৌদি আরব এখনো সেই আলোচনায় ফিরতে নারাজ।

যুদ্ধবিরতি ছাড়াও সৌদি আরব স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পদক্ষেপ দেখতে চায়, যা ইসরায়েল মানতে রাজি নয়।

সৌদি আরব কি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পুরস্কার হিসেবে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত পারমাণবিক প্রযুক্তির বিষয়েও একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আলোচনা করছিল।

সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টি আলোচ্যসূচির বাইরে থাকলেও সেই আলোচনা এখনো চলছে। গত বসন্তে মার্কিন জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস রাইট পারমাণবিক প্রযুক্তিতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে সৌদি আরব সফর করেছিলেন।

ট্রাম্প আব্রাহাম অ্যাকর্ডসকে তাঁর পররাষ্ট্রনীতির একটি প্রধান সাফল্য মনে করলেও একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়িক চুক্তিও চাইছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারমাণবিক চুল্লি ও তার সহায়ক অবকাঠামো প্রস্তুতকারক ওয়েস্টিংহাউস এবং বেচটেলের মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে লাভবান হতে চায়। এ জন্য সম্ভবত তাদের স্বার্থে ইসরায়েল ইস্যুকে কিছুটা আড়ালে রাখা হতে পারে।

২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত তথাকথিত ‘১২৩ চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছিল। ওই চুক্তির আওতায় তারা জ্বালানির উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরুর মার্কিন অনুমতি পেতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

তবে সৌদি যুবরাজ ও তাঁর উপদেষ্টারা এমন একটি চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন, যা তাঁদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেবে। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, সৌদি আরবের ভূখণ্ডে প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে।

বছরের শুরুতে সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুলআজিজ বিন সালমান বলেছিলেন, ‘আমরা এটি (ইউরেনিয়াম) সমৃদ্ধ করব এবং আমরা এটি বিক্রি করব এবং আমরা একটি “ইয়েলো কেক” করব, যা ইউরেনিয়ামখনির পরের ও সমৃদ্ধকরণের আগের প্রক্রিয়াকে বোঝায়।

সৌদি আরবের এক বিশ্লেষক বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করা সৌদি আরবের জন্য বড় এক ছাড় হবে। এটি একটি অর্থনৈতিক বিষয়। কারণ, সৌদিরা জানে, তারা নিজেদের ইউরেনিয়াম নিজেরা সমৃদ্ধ করে বিক্রি করলে রপ্তানির চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবে। এটি জাতীয় মর্যাদারও একটি বিষয়। প্রশ্ন হলো, যদি তারা সমৃদ্ধকরণ না করে, তবে ট্রাম্পের কাছ থেকে তারা কী সুবিধা পাবে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বার্নার্ড হেকেল আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এর বিনিময়ে পারমাণবিক অস্ত্র আসতে পারে।

হেকেল বলেন, ‘আমার ধারণা, আপাতত তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও প্রক্রিয়াকরণ ছেড়ে দেবে। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পারমাণবিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা চাইবে, যার মধ্যে সৌদি আরবের মাটিতে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।’

ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার গ্রেগরি গাউস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র সব জায়গায় মোতায়েন ছিল। সৌদি আরবে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে না।’

গাউস আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত সাবমেরিনও আছে, যা বিশ্বের যেকোনো স্থানে যেতে পারে। ট্রাম্প কেবল বলতে পারেন, আমরা ভারত মহাসাগরে পারমাণবিক সাবমেরিন টহলের প্রতিশ্রুতি দেব।’

সৌদি আরব কি এফ-৩৫ পাবে

আলোচনার প্রস্তুতির সঙ্গে খোঁজখবর রাখেন—এমন একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন, এই সফরের জন্য সৌদি আরব ১৮টি বিমানে ১ হাজার কর্মকর্তাকে ওয়াশিংটনে নিয়ে আসার কথা।

২০১৮ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের সময় মঙ্গলবার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন।

ওই বছর সফরের সাত মাস পর ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগি খুন হন। তখন মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ওই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন। যুবরাজ বিন সালমানের নির্দেশে ওই ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে শুরুর দিকে রিয়াদের সম্পর্ক বেশ খারাপ ছিল। তবে ২০২২ সালের মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ স্বাভাবিক হয়ে আসে। কারণ, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি জ্বালানির প্রয়োজন ছিল।

ওই ধাক্কার পর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অতীতের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। তিনি ইয়েমেনে হুথিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করেছেন এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছেন। বিচ্ছিন্নতা থেকে যুবরাজ অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত মে মাসে ট্রাম্প উপসাগরীয় অঞ্চল সফর করার সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে যেসব চুক্তি হয়েছিল, সেগুলোকে একীভূত করার লক্ষ্যে যুবরাজের এই সফর হতে যাচ্ছে।

দুই দেশ ১৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষাচুক্তির ঘোষণা দিয়েছিল। সেই সময় এমইইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ সেই সম্ভাব্য চুক্তির অংশ ছিল। গত সপ্তাহে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তিতে সৌদির কাছে ৪৮টি পর্যন্ত এফ-৩৫ বিক্রির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই বিক্রি নিয়ে মার্কিন ও ইসরায়েলি কিছু কর্মকর্তা কয়েক মাস ধরে উদ্বিগ্ন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যারা এফ-৩৫ পরিচালনা করে এবং তারা এটিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে তাদের গুণগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের মূল অংশ হিসেবে দেখে।

ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ বিক্রির পরিকল্পনা বাইডেন প্রশাসনের সময় স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। কারণ, এতে চীন প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার পেতে পারে বলে উদ্বেগ ছিল। বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা এমইইকে বলছেন, সৌদি আরবের ক্ষেত্রেও মার্কিন কর্মকর্তারা কয়েক মাস ধরে একই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

মহাকাশ–বিশেষজ্ঞ রিচার্ড আবৌলাফিয়া বলেন, এই চুক্তি হলে ইউরোপীয় বেশ কয়েকটি দেশের অর্ডার শেষ হওয়ার পরে তাদের বিমান পেতে আরও তিন বা চার বছর সময় লাগবে।

আবৌলাফিয়া বলেন, ওই অঞ্চলে ইসরায়েলের গুণগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হলে সৌদি আরবের কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রির ক্ষেত্রে বড় এক সমস্যায় পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। বহু বছর ধরে তারা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার নীতি অনুসরণ করেছে।

১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে এফ-১৫ এস স্ট্রাইক ইগল যুদ্ধবিমান বিক্রি করেছিল, যার রাডার ও ইলেকট্রনিক কাউন্টারমেজার্স (শত্রুর ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা জ্যাম করার প্রযুক্তি) নিম্নমানের ছিল। ধারণা করা হয়, আংশিকভাবে ইসরায়েলপন্থী লবিং গোষ্ঠীকে শান্ত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র এই কৌশল নিয়েছিল।

আবৌলাফিয়া বলেন, ইসরায়েলিরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হবে, এটা ঠিক। তবে সাধারণত ইসরায়েল তাদের নিজস্ব সরঞ্জাম উন্নত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত অধিকার পায়, যা সৌদি আরব পায় না।

এই বিশেষজ্ঞ আরও যোগ করেন, অন্য যেকোনো বিমানের চেয়ে এফ-৩৫ একটি ‘কিল সুইচ’-এর কাছে অনেক বেশি দুর্বল। এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র দূর থেকেও এসব যুদ্ধবিমান অকার্যকর করতে পারে।

ইসরায়েল নিজেই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এফ-৩৫ উন্নয়ন করেছে। মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল তার এফ-৩৫ আই আদির সংস্করণটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে, এটি তার স্টিলথি বৈশিষ্ট্যকে ক্ষুণ্ন না করেই অতিরিক্ত জ্বালানি ট্যাংক বহন করতে পারে। এই পরিবর্তনের কারণে ইসরায়েল জুনে ইরানের ওপর আকস্মিক হামলার সময় জ্বালানি না ভরেই হাজার হাজার মাইল ঘুরে এফ-৩৫ বিমান ওড়াতে সক্ষম হয়েছিল।

সৌদি বিশ্লেষক আলঘান্নাম গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটে বলেছিলেন, প্রকৃত অর্থে এ ধরনের ‘বিষয়বস্তুর স্থানীয়করণ’ ট্রাম্পের কাছ থেকে চাইছে সৌদি আরব।

আলঘান্নাম বলেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সৌদি অ্যারাবিয়ান মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ এই শিল্পে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারবে না।

ড্রোন থেকে ডেটা সেন্টার: সৌদির এআই এজেন্ডা

এফ-৩৫ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব শত শত এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন নিয়ে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করছে।

তবে প্রতিরক্ষাশিল্প–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রিয়াদ এখন আরও বেশি বাছাই করছে। যুবরাজের এই সফরের সময় ছোট ছোট প্রতিরক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিগুলোর দিকে নজর রাখা দরকার।

সৌদি আরব মার্কিন স্টার্টআপ শিল্ড এআইয়ের সঙ্গে আলোচনা করছে। এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি এআই-চালিত ভি-ব্যাট ড্রোন বর্তমানে ইউক্রেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমন উল্লম্বভাবে উড়তে সক্ষম ড্রোন নিয়েও কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান, যা আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানার অস্ত্র বহন করতে পারে।

আলোচনা সম্পর্কে জানেন—এমন এক ব্যক্তি এমইইকে বলেছেন, রিয়াদ বড় আগ্রহের একটি ক্ষেত্র। সৌদিরা মাঝারি আকারের ড্রোন খুঁজছে। তারা এমন কোলাবোরেটিভ কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট চাইছে, যা যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি উড়তে পারে। একই সঙ্গে সৌদি আরবের জলসীমায় নজরদারির জন্য উপযুক্ত ড্রোন চায়।

ছোট প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সৌদি আরবও মার্কিন এআই চিপের দিকে নজর দিচ্ছে। মে মাসে এনভিডিয়া ঘোষণা দিয়েছিল, তারা সৌদি আরবের এক লাখ কোটি ডলারের সরকারি বিনিয়োগের এআই প্রতিষ্ঠান হিউমেনের কাছে হাজার হাজার উন্নত ব্ল্যাকওয়েল চিপ বিক্রির পরিকল্পনা করেছে।

সৌদি আরব নিজেকে ডেটা সেন্টারগুলোর জন্য সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহকারী একটি এআই হাব হিসেবে তুলে ধরছে। হিউমেন রিয়াদ থেকে দাম্মাম পর্যন্ত ডেটা সেন্টার তৈরি করছে, যা ২০৩৪ সালের মধ্যে ৬ দশমিক ৬ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হবে বলে তারা জানিয়েছে। সৌদি এআই প্রতিষ্ঠান ডেটাভোল্ট দেশটির লোহিত সাগরের উপকূলে ৫০০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি ডেটা সেন্টার তৈরি করছে।

গত মে মাসে ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরের সময় এআই–চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হলেও চিপ সরবরাহের কাজ থেমে আছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রকাশ্যে ঘোষণা আসেনি।

কিছু মার্কিন কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের এআই প্রযুক্তিতে চীন প্রবেশাধিকার পেতে পারে। যুবরাজ ওয়াশিংটনে এসব চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে চাপ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!