ভেনেজুয়েলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়ে ওভাল অফিসে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প যখন ক্যারিবীয় অঞ্চলে বড় ধরনের নৌসেনা মোতায়েন করেছেন, মাদক পাচারকারী সন্দেহে নৌকাগুলোতে বোমা বর্ষণ করছেন এবং ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা এড়িয়ে চলতে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন, ঠিক তখনই সোমবার (১ ডিসেম্বর) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
অন্যদিকে তাঁর প্রতিপক্ষ নিকোলাস মাদুরো ‘দাসত্বের শান্তি’ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা বাড়ছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটকে এ বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি, প্রেসিডেন্ট এই বিষয় এবং অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।’
কারাকাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে চলা উত্তেজনার পর ট্রাম্প কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কি না, তা বলতে রাজি হননি লেভিট। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই বৈঠকের নির্দিষ্ট বিবরণ দিতে যাচ্ছি না।’
তবে লেভিট ভেনেজুয়েলার মাটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের হাতে অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে এবং আমি তাঁকেই সেসব নিয়ে কথা বলতে দেব।’
‘উপনিবেশের শান্তি’ নয়
মাদুরো ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন। কারাকাসে এক সমাবেশে তিনি হাজার হাজার সমর্থকের উদ্দেশে বলেন, ভেনেজুয়েলা ‘দাসত্বের শান্তি’ চায় না।
মাদুরো বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, তবে সার্বভৌমত্ব, সমতা ও স্বাধীনতা নিয়ে শান্তি চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দাসত্বের শান্তি চাই না, উপনিবেশের শান্তিও চাই না।’
অনুষ্ঠানে পতাকা হাতে সমর্থকদের সঙ্গে মাদুরোকেও মঞ্চে নাচতে দেখা যায়।
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ এবং অন্যান্য যুদ্ধজাহাজ ওই অঞ্চলে মোতায়েন করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন কথিত একটি মাদক চক্রকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং দাবি করেছে, ওই চক্রটি মাদুরো পরিচালনা করেন।
ওয়াশিংটন বলছে, সেপ্টেম্বরে শুরু করা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের উদ্দেশ্য হলো ওই অঞ্চলে মাদক পাচার দমন করা। তবে কারাকাস জোর দিয়ে বলছে, এ পদক্ষেপের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো সরকার পরিবর্তন।
ট্রাম্প গত রোববার নিশ্চিত করেছেন, জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম তিনি মাদুরোর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তবে আলাপের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলব না, এটি ভালো বা খারাপ হয়েছে। এটি একটি ফোনকল ছিল।’
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্প ও মাদুরো সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অন্যদিকে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, মাদুরো ক্ষমতা ছাড়লে তাঁর জন্য সাধারণ ক্ষমার শর্তও আলোচনায় ছিল।
রিপাবলিকান সিনেটর মার্কওয়াইন মুলিন গত রোববার সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ টক শোতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোকে রাশিয়া বা অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে।
বিমান হামলার বিতর্ক
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার প্রয়াত বামপন্থী নেতা হুগো শ্যাভেজের রাজনৈতিক উত্তরসূরি মাদুরোকে ‘কার্টেল অব দ্য সানস’–এর প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। একই সঙ্গে তাঁকে ধরিয়ে দিতে পারলে পাঁচ লাখ ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলা ও তাঁর মিত্রদেশগুলো বলছে, এমন কোনো সংস্থার অস্তিত্বই নেই। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈধ বিজয়ী হিসেবেও মাদুরোকে স্বীকৃতি দেয়নি।




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন