বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রহিম শেখ

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম

ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির গতি ফেরানোর লক্ষ্য 

রহিম শেখ

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশ ঘাটতি বাজেট করে আসছে। মূলত ধার করে সরকারকে বাজেটের ঘাটতি পূরণ করতে হয়। এই ধার করার প্রক্রিয়া সাংসারিক খরচ মেটানোর মতোই। অর্থাৎ সারা বছর ধরে সরকার যত টাকা ব্যয় করে, তাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর একটি হলো পরিচালন ব্যয়। আরেকটি উন্নয়ন ব্যয়।

ধরা যাক, বাংলাদেশে আগামী এক বছর (এ ক্ষেত্রে অর্থবছর) এ দুই রকম কাজ চালাতে মোট লাগবে ১০০ টাকা। তবে সব ঠিক থাকলে কর খাতে সরকারের আয় হতে পারে সর্বোচ্চ ৬৩ টাকা। বিভিন্ন ফি, টোল, জরিমানা, সুদসহ বাকি সব কর্মকাণ্ড থেকে আয় হবে ৬ টাকা। এ দুই উৎসের হিসাব পুরোপুরি মিললেও আরও দরকার হবে ৩৪ টাকা। সেজন্যও আছে সরকারের পরিকল্পনা।

ব্যাংকসহ নানা মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১৫ টাকা। আর বিদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া যেতে পারে বাকি প্রায় ৭ টাকা। তার মধ্যে ৫০ পয়সার মতো অনুদান আসবে, যা কখনোই ফেরত দিতে হবে না। আর ১১ টাকা ৫০ পয়সা ঋণ দেবে দাতারা।

এটাই হলো আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের জন্য অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের প্রস্তাবিত বাজেটের আয় পরিকল্পনা। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট। নতুন বাজেটের মোট আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।

আবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা আশা করেছেন, মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ করতেই আকার কমানো হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অবশ্য চলতি জুনেই মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

তার মতে, বাজেটে সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য কমিয়ে এনে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে চায় বর্তমান সরকার। বিশেষ করে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ থাকবে নতুন বাজেটে।

বরাবরের মতো এবারের বাজেটেরও বড় অংশ ব্যয় হবে পরিচালন (বেতন-ভাতা-পেনশন, সুদ, সরকারি অফিসের নিয়মিত কেনাকাটা, ভর্তুকি ইত্যাদি) খাতে, যার পরিমাণ ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এনবিআরকে আদায় করতে হবে। এনবিআর বহির্ভূত কর এবং কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

তার মানে, পরিচালন ব্যয় মিটিয়ে উন্নয়নকাজের জন্য সরকারের কাছে উদ্বৃত্ত থাকবে মাত্র ১৯ হাজার কোটি টাকা। অথচ এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারই ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

তার মানে হচ্ছে, ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি পূরণে সফলতার ওপর নির্ভর করছে, বিশাল আকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে কি না? শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, প্রস্তাবিত বাজেটের নানা ক্ষেত্রে সাধ ও সাধ্যের এই ফারাক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

তবে বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বাজেটের আকার ছোট রাখায় যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে আমরা চেষ্টা করেছি সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে। তাই প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরির খতিয়ান তুলে ধরার পরিবর্তে আমরা এবারের বাজেটে প্রাধান্য দিয়েছি মানুষকে।

মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, জীবিকার নিরাপত্তা এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ এ অত্যাবশ্যক উপাদানগুলো ছাড়া যেকোনো রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে পড়ে, দুর্বল হয় সমাজের ভিত। এবারের বাজেটে তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমাগত যেসব সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার সুবিধা ভোগ এবং যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে তা মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দিকেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় মোটাদাগে আগামী অর্থবছরে অর্থনীতির বেশকিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছেন। এরমধ্যে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। আপাতত প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির পরিবর্তে অর্থনীতির ভিত মজবুত করার দিকে অধিকতর মনোযোগ দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, এ শক্তিশালী ভিতই হবে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সোপান। আগামীর সেই বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত জীবন এবং সব স্তরে বৈষম্যহীন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান হবে সরকারের মূল লক্ষ্য। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সার্বিক পরিকল্পনা বাজেট বক্তৃতায় উঠে আসেনি। যেটুকুই বা এসেছে, তাও গতানুগতিক।

যেমন মূল্যস্ফীতিকে প্রধান চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে চাহিদার রাশ টেনে ধরা ও সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। আগের প্রায় সব বাজেটেও এমন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে তা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। একই সঙ্গে এবার বাজেট ঘাটতি হ্রাস ও সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। আবার এই ধারা বেশিদিন চললে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হবে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।

এ কারণে আগামী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সরকারি ব্যয় ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে। সেটা আবার রাজস্ব আয় কতটা বাড়ানো যাচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করবে। আয় বাড়াতে কর অব্যাহতি তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। কিন্তু বিভিন্ন খাতের কর অব্যাহতি তুলে নেওয়া হলে হয় সেসব খাতের গতি কমে যাবে, না হয় বাজারে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে।

এসব করেও রাজস্ব আয় যেটুকু বাড়ানো যাবে, তাতে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি পূরণের সম্ভাবনা নেই। তাই বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে ঋণের ওপরই নির্ভর করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাজেটের ২০ শতাংশ আসবে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে। আগামী এক বছরে শুধু ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। পরিকল্পনা মতো রাজস্ব আদায় না হলে ঋণের অঙ্ক আরও বাড়বে। এর ফলে ব্যাংকে তারল্য সংকট তৈরি হবে। আর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ৮৬ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই অঙ্ক ৮১ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে বিদেশি ঋণ-নির্ভরতা বাড়ছে ৪ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। তবে অতিরিক্ত এই ঋণ পেতে হলে সরকারকে যে ঋণদাতা সংস্থাগুলোর আরও শর্ত পূরণ করতে হবে, তা না বললেও চলে।

তার অর্থ হলো, আগামীতে বেশকিছু খাতে করের আওতা আরও বাড়বে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অগ্রিম কর হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শিশু খাদ্য, মসলা, ফলমূল, পোশাক, যানবাহন, খেলনা, সিরামিক পণ্য, বাথরুম ও বৈদ্যুতিক ফিটিংস, সুইচ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো পণ্যের মূল্য বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকারকর্মীরা।

এতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে। সার্বিকভাবে এই পরিস্থিতি দেশে বিনিয়োগের প্রতিকূল পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। আর বিনিয়োগ ও উৎপাদনের গতি বাড়াতে না পারলে স্বাভাবিকভাবেই কমবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!