রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ০১:৩১ এএম

একে একে ঝরে যাচ্ছে ফুলগুলো

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ০১:৩১ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছোট্ট মায়াবী চেহারার তাসনিম আফরোজা আইমান। বয়স মাত্র ১০ বছর, ছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালেও ইউনিফর্ম পরে তৈরি হয়েছিল স্কুলের জন্য। নাশতা শেষে টিফিনবক্সও সাজিয়ে দিয়েছিলেন মা।

আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে স্কুলে গিয়েছিল ছোট্ট আইমান। ছুটি হলে আবার ঘরে ফিরবে এই আশায় ছিলেন মা আয়শা আক্তার কানন। তাসনিম ফেরেনি, ছুটির কিছুক্ষণ আগেই বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের আগুনের বলয় তাকে চিরতরে ছুটি দিয়েছে জীবন থেকে। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় চার দিন অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে অবশেষ হেরে গেল শিশুটি।

গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আইমান। ছুটি হলে বাসায় ফেরার কথা ছিল যার, সেই আয়মান এখন চিরনিদ্রায়। চিকিৎসকেরা জানান, আইমানের ছোট্ট শরীরের ৪৫ শতাংশই দগ্ধ হয়েছিল। 

শুধু আইমান নয়, সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে একই দিনে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেক শিক্ষার্থীরও প্রাণ নিভে যায়। গতকাল দুপুর ১টা ৫ মিনিটে মারা যায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল মুসাব্বির মাকিন (১৩)। মাকিনের শ্বাসনালিসহ শরীরের ৭০ শতাংশ দগ্ধ থাকায় প্রথম থেকেই হাসাপতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিল। এভাবেই একে একে ঝরে যাচ্ছে ফুলগুলো। সময় যত গড়াচ্ছে, স্বজনদের মধ্যে ততই বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বাড়ছে প্রিয় সন্তানকে চিরতরে হারানোর শঙ্কা।

জানা গেছে, ঢাকার ৪ হাসপাতালে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে অন্তত ৫০ জন, যার মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৪০ জন। এই ৪০ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। অন্য রোগীদের মধ্যে আজ শনিবার চার থেকে পাঁচজনকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (ঢাকা) আটজন, শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আইমানের ফুপু শিউলি জানান, আইমান দাদির খুবই প্রিয় ছিল। ছুটির পর ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারের গাড়িচালক নিতে এসে স্কুলের দোলনায় ওর ব্যাগ পায়। স্কুল শেষে আইমান প্রতিদিন দোলনায় বসে থাকত। ওখান থেকে গাড়িচালক তাকে বাসায় নিয়ে যেত। ঘটনার দিন প্রায় দেড় ঘণ্টা পর অন্য মোবাইল ফোন থেকে নিজেই ফোন করে দাদিকে বলে, ‘দাদি, আমি পুড়ে গেছি।’ 

এদিকে মেয়ের মৃত্যুর খবরে শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন মা আয়েশা আক্তার কানন। মেয়ের জন্য কান্না তো করছেনই না, বলছেন না কোনো কথাও। ফলে আইমানকে হারানোর শোকের পাশাপাশি তাকে নিয়েও চিন্তিত পরিবারের সদস্যরা।

শিশুটির মামা শামীম আহমেদ বলেন, সেদিন থেকে বোনটা আমার বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। কোনো রকম কথা নেই, কান্না নেই। পুরোই বাকরুদ্ধ। একদিকে আদরের ছোট্ট ভাগ্নিকে হারিয়ে আমারা সবাই শোকে কাতর, এখন বোনের জন্যও নতুন করে চিন্তা হচ্ছে। 

স্থানীয় প্রশাসনকে বোনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বেশ কয়েকবার খবর দেওয়া হলেও রাত ৮টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত তাদের পাশে প্রশাসনের কেউ দাঁড়ায়নি।

বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল দুপুর ১টার দিকে মুসাব্বির মাকিন নামে দগ্ধ আরও এক শিশু মারা যায়। বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিল সে। তার বাবার নাম মো. মহসিন। তিনি পেশায় স্যানিটারি ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি গাজীপুর সদরের বড়বাড়ী এলাকায়। সেখান থেকেই নিয়মিত দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুলে যাতায়াত করত দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট মুসাব্বির।

মাকিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, মুসাব্বিরের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তাসনিম আফরোজ আইমান। তার শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সে মা-বাবার সঙ্গে রাজধানীর উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে থাকত। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। বাবার নাম ইসমাইল হোসেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। মাকিন ও আইমানের মৃত্যুতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১৫ জন মারা গেল।

পাঁচজনের অবস্থা সংকটাপন্ন, ১০ জনকে কেবিনে হস্তান্তর: যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪০ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপে চিকিৎসাধীন ২৫ জনের মধ্যে ১০ জনকে পোস্ট অপারেটিভে রাখা হয়েছে। বাকি ১৫ জন রোগীকে কেবিনে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আজ (গতকাল) আমরা দুজন বাচ্চাকে হারিয়েছি। সকালে আমরা হারিয়েছি তাসনিম আফরোজ আইমানকে আর দুপুরের দিকে আমরা হারিয়েছি মুসাব্বির মাকিনকে। দুজনকেই আমরা উপস্থিত থেকে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। এখান থেকে নিজ নিজ জেলায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সিভিল সার্জনকে বলে দেওয়া হয়েছে ভালোভাবে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করার জন্য।

ভর্তি রোগীর বিষয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে জাতীয় বার্নে ভর্তি আছে ৪০ জন। এই ৪০ জনের মধ্যে ক্রিটিক্যাল রোগী আছে পাঁচ জন, সিভিয়ার আছে ১০ জন। ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপে ভর্তি আছে ২৫ জন। এদের মধ্যে ১০ জনকে পোস্ট অপারেটিভে রাখা হয়েছে। বাকি ১৫ জনকে কেবিনে হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) আমাদের পরিকল্পনা আছে চার থেকে পাঁচজনকে ছুটি দেওয়ার। পরে পর্যায়ক্রমে কিছুসংখ্যাক রোগীকে ছুটি দিতে পারব বলে আমরা আশা করছি।  

রোগীদের অবস্থা প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জন্য একটি আশার খবর হলো, যেসব রোগী ভ্যান্টিলেশনে ছিল, তাদের মধ্যে দুজন টিউবে আছে, কিন্তু তারা সজাগ অবস্থায় নিজেরা নিজেরা শ^^াস নিতে পারছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যে যা বলা হয়েছে: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৫ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেলে একজন, লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে একজন (অজ্ঞাত) ও ইউনাইটেড হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

মাইলস্টোনে উৎসুক জনতার ভিড়: মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের পর সেখানে ভিড় জমায় হাজার হাজার মানুষ। উৎসুক জনতার ভীড়ের সঙ্গে যুক্ত হয় অতিরিক্ত স্বেচ্ছাসেবীর যন্ত্রণা। সব মিলিয়ে উদ্ধার অভিযানে বেশ বেগ পেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।

এরপর উৎসুক জনতার ভিড় কিছুটা কমতে থাকলেও গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে বিমান বিধ্বস্তস্থলে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সেখানে ভিড় জমায় শত শত মানুষ। কেউ ছবি তোলে, কেউ ভিডিও করে আবার কেউ ফেসবুক লাইভ করে ভবনের পোড়া ক্ষত ও ভবনের সামনে যেখানে বিমানের সামনের অংশের কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে, সেই দৃশ্যগুলো দেখাতে থাকেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি। গতকাল সরজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়।

দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার স্থান দেখতে পরিবারসহ মাইলস্টোন স্কুল ক্যাম্পাসে যান গার্মেন্টসকর্মী শামীম মোল্লা। তিনি বলেন, দেখতে এলাম কোথায় বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তেমন কিছুই দেখতে পারলাম না। সব সরিয়ে ফেলেছে, শুধু পোড়া দাগ দেখতে পাচ্ছি।

মাইলস্টোন স্কুলের অফিস সহকারী মো. সিয়াম জানান, শুক্রবার শুধু সাধারণ লোকজনকে প্রবেশ করতে অনুমতি দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কোনো সাংবাদিক প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জুমার নামাজের পরে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে আবার প্রবেশ করতে দেওয়া হবে সাধারণ লোকজনকে।

Shera Lather
Link copied!