রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (রামেক) ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। হাসপাতালে আসা-যাওয়া রোগী ও মৃতদেহ বহনে তারা গলাকাটা ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রেই শুধু নয়, হাসপাতালে মৃত্যু হলে মরদেহ পরিবহনের ক্ষেত্রেও এসব অ্যাম্বুলেন্সের মালিক ও চালকেরা কয়েক গুণ ভাড়া দাবি করছেন। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের বাইরের কোনো গাড়ি ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। এমনকি লাশ বহনে ভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করলেও সিন্ডিকেটকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য করা হয়।
এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন নগরীর শিপাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানে আলম জনি। একটা সময় হাসপাতালের দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি অন্তত ৩০টি অ্যাম্বুলেন্সের মালিক। তার ভাগনে সাদ্দাম হোসেনের মাধ্যমে পুরো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।
গত বছরের আন্দোলনের পর জনি আত্মগোপনে চলে গেলেও এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন পুরো অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা। সিন্ডিকেটে যুক্ত রয়েছেন আরও কয়েকজন চালক ও মালিক, যাদের প্রত্যেকের গাড়িই রয়েছে এই চক্রের আওতায়।
গোদাগাড়ীর চব্বিশনগর গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের (৪০) মৃত্যুর ঘটনায় উঠে আসে এই সিন্ডিকেটের কার্যকলাপ। মৃত্যুর পর ২০ কিলোমিটার দূরের গ্রামের বাড়িতে মরদেহ নিতে অ্যাম্বুলেন্সচালকেরা দাবি করেন ৫ হাজার টাকা। অন্য গাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা করলে সিন্ডিকেট বাধা দেয়, এমনকি অন্য গাড়ি ব্যবহার করলেও ‘সমিতি ফি’ হিসেবে দিতে হয় ২ হাজার টাকা।
জাহিদুলের স্বজন আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিজেরাই গাড়ি এনে মরদেহ নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা জোর করে নিজেরা নিতে চায়। একপর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের গেট ও আশপাশে দাঁড়িয়ে আছে ৩০ থেকে ৩৫টি পুরোনো, ফিটনেসবিহীন মাইক্রোবাস, যেগুলো অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব চালক ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালের সামনে ঘোরাফেরা করেন এবং রোগীর স্বজনদের লক্ষ্য করে ডাকাডাকি করতে দেখা যায়।
রামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এএসআই আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ বলেন, ‘সিন্ডিকেটটি বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :