২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কারের দাবি থেকে শুরু করে আওয়ামী সরকার পতনের এক দফা তথা গণঅভ্যুত্থানে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক শ্যামলী সুলতানা জেদনী। জুলাইয়ে শহিদ ভাইয়ের মৃত্যুর সঠিক বিচার অথবা ফ্যাসিস্ট সরকারকে গদি ছাড়তে হবে এ প্রত্যয় নিয়েই রাজপথে নেমেছিলেন বলেই জানান। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষার্থী জেদনী বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক। রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে জুলাই আন্দোলন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছের এফ এ শাহেদ।
রূপালী বাংলাদেশ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে কখন যুক্ত হলেন?
শ্যামলী সুলতানা জেদনী: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ মিডিয়ার মাধ্যমে সংবাদ পাই। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে একেবারে শুরুতেই যুক্ত হইনি। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও অন্যান্য ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে হামলা করে। একই সঙ্গে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে আহত বিক্ষোভকারীদের ওপরও হামলা চালায়। তার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই আমরা রাজপথে নেমে আসি। এদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় ৬ শিক্ষার্থী নিহত হয়। বিশেষত রংপুরে আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যার ভিডিও দেখলাম, তখন আমরা হত্যার সঠিক বিচার অথবা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে সে বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম।
রূপালী বাংলাদেশ: গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদানের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এটা কীভাবে দেখেন?
শ্যামলী সুলতানা জেদনী: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা খাতে ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ১৮-এর কোটা আন্দোলনে যুক্ত ছিল। তবে ২৪-এর জুলাইয়ে রাজপথে তীব্র সাহস এবং ক্ষোভের প্রতিফলন নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, তা শুধু সাহসিকতার নয়, রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তনের একটি ঘটনাও বটে। তবে দেশের একটি শ্রেণির ধারণা বেসরকারির শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বোঝে না। একটি ভুল ধারণা যার ওপর ভিত্তি করেই অনেক সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা থাকার পরও তাদের যোগ্য স্থান দেওয়া হচ্ছে না। অভ্যুত্থান-পরবর্তী যত নতুন রাজনৈতিক দল বা সংগঠন হয়েছে সেখানে বেসরকারির শিক্ষার্থীরা থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়নি, এটা সঠিক মূল্যায়নের ঘাটতি অবশ্যই।
রূপালী বাংলাদেশ: অভ্যুত্থানের এক বছর পর কী পরিবর্তন অনুভব করছেন?
শ্যামলী সুলতানা জেদনী: অভ্যুত্থানের দিনগুলো ভোলা সম্ভব নয়। আন্দোলনে দেশের জন্য প্রায় দুই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। অনেকেই চোখ হারিয়েছেন, হাত-পা হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন- এগুলো ভুলবার মতো নয়। অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও মনে হয়েছে জুলাইয়ের যে প্রত্যাশা ছিল, তার অনেকটাই পূরণ হয়নি। জুলাই থেকে আরেক জুলাই এলেও যে কাজগুলো করার কথা ছিল, সেগুলো হয়নি। নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম, সেগুলো পূরণ না হওয়ায় হতাশাও কাজ করে।
রূপালী বাংলাদেশ: জুলাইয়ে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল বিশাল এবং বর্তমান বাংলাদেশে তাদের কেমন ভ‚মিকায় দেখতে চান?
শ্যামলী সুলতানা জেদনী: দেশের রাজনীতি ও আন্দোলন-সংগ্রামে নারী শিক্ষার্থী এবং নারীদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বিরল। আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ৫ আগস্টের পর নারীদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তবে, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সময় যত যাচ্ছে যে নারীরা আন্দোলন সম্মুখ সারিতে ছিল, তারা নানা সাইবার বুলিং, হুমকির শিকার হচ্ছেন, তা হতাশাজনক।
আপনার মতামত লিখুন :