মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০১:০৬ এএম

সাপের উপদ্রব বাড়ায় কেনা হচ্ছে প্রতিষেধক

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০১:০৬ এএম

সাপের উপদ্রব বাড়ায় কেনা হচ্ছে প্রতিষেধক

বাংলাদেশে সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার কমাতে সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সাপের বিষের প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম) কেনার জন্য ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোর (সিএমএসডি) জন্য। যেখান থেকে সারা দেশে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ ও প্রতিষেধক সরবরাহ করা হয়ে থাকে।


সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক আদেশে এই বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দটি চূড়ান্ত হয়। যার একটি অনুলিপি রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে।আদেশে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূল বাজেটের আওতায় ‘প্রতিষেধক’ খাতে বরাদ্দকৃত মোট এক হাজার কোটি টাকা থেকে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।এই বরাদ্দ প্রতিষেধক খাতে স্থানান্তর করে সিএমএসডির অনুকূলে ব্যয় করা যাবে। অর্থ বরাদ্দের অনুমোদনে আটটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার, নির্ধারিত খাতে ব্যয় এবং ভবিষ্যতে সংশোধিত বাজেটে সমন্বয়।


অর্থ বরাদ্দের পেছনের প্রেক্ষাপট
ভেনম রিসার্চ সেন্টারের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ লাখ মানুষকে সাপে কামড়ায়। যার মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ মারা যায়। যারা সাধারণত গরিব মানুষ। এর একটি বড় অংশ ঘটে বর্ষা মৌসুমে এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোতে। সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগের মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল থেকে শুরু করে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা সব অঞ্চলেই সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটছে। এই অঞ্চলে গোখরা, কেউটে, কোবরা, রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।


পরিসংখ্যানে দেখা যায়, খুলনা বিভাগে ১ লাখ দংশনকারীর মধ্যে ৬১৫ জন মানুষ মারা যায়। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বাংলাদেশে বছরে আনুমানিক ৬০ হাজারের বেশি মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন, যার মধ্যে মৃত্যুহার ৩ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায়।বিশেষ করে চিকিৎসা সুবিধাবঞ্চিত গ্রামাঞ্চলে অ্যান্টিভেনম না পাওয়ার কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। যদিও সরকার কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিষেধক সংগ্রহ করছে, তবে বিতরণব্যবস্থার দুর্বলতা, ভৌগোলিক বৈষম্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে মজুত না থাকার কারণে সাপের কামড়ে মৃত্যুহার এখনো উদ্বেগজনক।


অ্যান্টিভেনম কি
অ্যান্টিভেনম হলো এক ধরনের ওষুধ যা সাপের বিষের মতো বিষাক্ত পদার্থের প্রভাবকে নিষ্ক্রিয় করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয় এবং বিষাক্ত পদার্থের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টিভেনম নির্দিষ্ট বিষের জন্য তৈরি করা হয়, তাই কোন অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হবে তা সাপের প্রজাতি এবং বিষের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।


এখনো ওঝা নির্ভরতা সাপ কামড়ালে ৬১ ভাগ লোক এখনো ওঝার কাছে যায়। যেটা সবচেয়ে বড় ভুল। সাপ কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। সাপ হাতে বা পায়ে কামড়ালে সাধারণত আক্রান্ত অংশের ওপরে রশি বা গামছা দিয়ে টাইট করে বাঁধা হয়। যা একেবারেই ভুল প্রাথমিক চিকিৎসা। সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অজ্ঞতা দূর করে মানুষকে সচেতন করা গেলেই সাপের কামড়ে আক্রান্ত মানুষকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। আর সব সাপ বিষধর নয়। তা ছাড়া বেশির ভাগ সাপ উত্ত্যক্ত করা না হলে সহসা কামড়ায় না। সাপকে কোনোক্রমেই মেরে ফেলা যাবে না। মনে রাখতে হবে সাপ আমাদের সম্পদ।


যা বলা হয়েছে আদেশে সরকারি বরাদ্দে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আদেশটিতে বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হলো, সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালা অনুসরণ- বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ২০০৮ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে হবে। নির্ধারিত খাতে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা- বরাদ্দকৃত অর্থ শুধু অ্যান্টিভেনম ক্রয়ের জন্যই ব্যবহার করা যাবে। অন্য কোনো খাতে ব্যয় করলে তা হবে অননুমোদিত ও আইনবহির্ভূত। দ্বৈততা পরিহার ও প্রশাসনিক নজরদারি- একাধিক খাতে একই উদ্দেশ্যে বরাদ্দ কিংবা একই ওষুধের জন্য দ্বৈত বরাদ্দ রোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রশাসনিকভাবে নিশ্চয়তা দিতে হবে। বছর শেষে প্রতিবেদন দাখিলÑ বরাদ্দের বিপরীতে ক্রয় ও সংগ্রহ সম্পন্ন হলে তার বিস্তারিত বিবরণ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে প্রতিবছর জানাতে হবে। সংশোধিত বাজেটে কোড সমন্বয়Ñ পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে (২০২৫-২৬ অর্থবছরের) সংশ্লিষ্ট কোডে এই অর্থ বরাদ্দ অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এবং অব্যয়িত অর্থ ফেরতÑ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (৩০ জুন ২০২৬-এর আগে) কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকলে তা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।


সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, তবে বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ
স্বাস্থ্য খাতের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের এই বরাদ্দ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও নিরবচ্ছিন্ন মনিটরিং না হলে অর্থ বরাদ্দের সুফল জনগণ পাবে না।
এই বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহবুব রাহমান বলেন, অ্যান্টিভেনম একটি জীবনরক্ষাকারী প্রতিষেধক। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে, এটির ঘাটতি, মেয়াদোত্তীর্ণ মজুত, কিংবা দূরবর্তী উপজেলায় সঠিক সময়ে না পৌঁছানো রোগীদের মৃত্যু ডেকে এনেছে। তাই কেন্দ্রীয় বরাদ্দের পাশাপাশি বিতরণ নেটওয়ার্ককে জোরদার করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।


সিএমএসডির ভূমিকাই এখন কেন্দ্রবিন্দু
সিএমএসডি সরকারের অধীনে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, ওষুধ ও প্রতিষেধক সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র। এই বরাদ্দের পর প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। সময়মতো মানসম্পন্ন প্রতিষেধক সংগ্রহ ও তা দ্রুত জেলার হাসপাতালগুলোতে পাঠানো এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই সাপের বিষের প্রতিষেধক আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য সরবরাহকারীদের তালিকা যাচাই-বাছাইও চলছে।


বরাদ্দ যথেষ্ট নয়, চাই কাঠামোগত পরিবর্তন
সরকারের এই বরাদ্দ নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে শুধু অর্থ বরাদ্দ করলেই চলবে না, বরং নিশ্চিত করতে হবে সাপের কামড়ে আক্রান্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীর হাতে সময়মতো প্রতিষেধক পৌঁছায় কি না।


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাপের কামড়কে একটি জরুরি স্বাস্থ্য ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা উচিত, যাতে সাপের ধরন অনুযায়ী প্রতিষেধকের ধরন, দ্রুত চিকিৎসা, প্রশিক্ষিত কর্মী এবং স্থানীয় পর্যায়ে সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সরকারি বরাদ্দের কার্যকারিতা তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন মাঠ পর্যায়ের একজন চিকিৎসক নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন, ‘আমার কাছে যথেষ্ট অ্যান্টিভেনম রয়েছে, আমি রোগীকে বাঁচাতে পারব।’

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!