প্রায় ১০ ঘণ্টার ব্যবধানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় ১০ দিন পিছিয়ে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর। গতকাল বুধবার রাত ৯টায় এ সদ্ধিান্তের কথা জানায় নির্বাচন কমিশন। এর আগে একই দিন বেলা ১১টায় ২৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে ২৮ সেপ্টেম্বর সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজার ষষ্ঠীর দিন পড়ায় বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া হয়। এরই ফলে রাত ৯টায় ২৫ সেপ্টেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নতুন সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
২৮ সেপ্টেম্বর নির্বচান অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ছিল কমিশনের। এর আগের দুই দিন শুক্রবার ও শনিবার হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে দুর্গাপূজার ছুটি। এমন সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় সনাতন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। কারণ পূজার ছুটি সামনে রেখে সনতানী শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যাবেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন।
তবে নির্বাচন কমিশন বলেছে, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় খোলা আছে এমন দিনেই তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে কে কবে বাড়ি যাবেন, তা কমিশনের দেখার বিষয় না।
এর আগে গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের তপশিল পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য পূর্বনির্ধারিত তপশিলের সময় যথেষ্ট হচ্ছে না। আবাসিক থেকে ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, ভোটার তালিকায় ছবি সংযুক্তি, ডোপ টেস্টের জন্য সময় প্রয়োজন। নির্বাচনি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’
এদিকে নির্বাচনের নতুন সময়কে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। দুপুর ২টায় বিক্ষোভ মিছিলে শাখার সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘একাধিকবার কমিশন ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বসেছে। সেখানে সবাই ১৫ তারিখেই নির্বাচনের পক্ষে মতামত দিলেও একটি দলকে সুবিধা দিতে নির্বাচন পিছিয়েছে। আমরা বলব, ১৫ তারিখেই নির্বাচন হতে হবে। কারণ নতুন যে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে আমাদের সনাতনী ভাইদের ধর্মীয় আবেগ জড়িত রয়েছে। তারা সবাই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবে। আর তাদের নির্বাচনের বাইরে রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।’
শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এক কথায় মশকরা শুরু করেছে। তারা সুকৌশলে পূজার ছুটির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে। এটি সুস্পষ্ট, তারা আমাদের সনাতন ভাইবোনদের এই নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়। এ এক বিরাট প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের অংশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ নির্বাচন কমিশনকে বলব, যদি মেটিক্যুলাস ডিজাইনের নির্বাচন করার স্বপ্ন ঘুণাক্ষরে চিন্তা করেন, তাহলে এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল লেখেন, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাষষ্ঠীর দিন ভোটগ্রহণ! কয়জন হিন্দু শিক্ষার্থী ভোট প্রদানের জন্য সেদিন ক্যাম্পাসে থাকবে? আবার ২৯ তারিখ থেকে দুর্গাপূজার বন্ধ। রাবিতে ছুটির দুই-তিন দিন আগ থেকেই শিক্ষার্থীদের বাড়ি যাওয়া শুরু হয়। এবার ভোট দেওয়ার জন্য দেরিতে যাবে, নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের মাঝে রাকসুকেন্দ্রিক এমন কোনো সচেতনতাও সৃষ্টি করা হয়নি।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন