বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৭:২৯ এএম

বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতার ভেলকি  - দুই মাসেই প্রভাষক  থেকে সহকারী অধ্যাপক

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৭:২৯ এএম

বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) আইন বিভাগে অস্থায়ী হিসেবে ২০১৬ সালের ১৯ জুন প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন মো. রাজিউর রহমান। তার নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল ‘তিনি এই পদে যোগদানের তারিখ থেকে ২ বছর শিক্ষানবিশ থাকার পর তার কর্মের আলোকে তাকে চাকরিতে কনফার্মকরণের বিষয়টি বিবেচিত হবে।’ কিন্তু নিয়োগপত্রে দেওয়া শর্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শিক্ষানবিশ থাকা অবস্থায় মাত্র ২ মাস ৮ দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট তিনি প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদ বাগিয়ে নেন। শুধু সহকারী অধ্যাপক নয় একই কায়দায় শর্ত পূরণ হওয়ার আগেই তিনি ভাগিয়ে নেন সহযোগী অধ্যাপক পদও। 

তবে কেবল পদোন্নতির ক্ষেত্রেই নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী ও কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা রাজিউল ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ শিক্ষকের ছেলেকে ভুয়া পোষ্য কোটায় ভর্তি করেন। এরপর আইন লঙ্ঘন করে অনুষদ পরিবর্তন করে সেই শিক্ষার্থীকে নিজ বিভাগে নিয়ে যান। আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিল্টন শেখ রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রশ্ন জালিয়াতি ও নিজ পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়ার লিখিত অভিযোগ জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একের পর এক অনিয়ম ও জালিয়াতি করলেও রাজিউর রহমান ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর নেপথ্যে কাজ করেছে তার রাজনৈতিক পরিচয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম বঙ্গবন্ধু পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে হেনস্তা করতেন। আওয়ামী লীগের ওপরের মহলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তার।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে তৎকালীন উপাচার্য খন্দকার নাসিরউদ্দিনের (যার বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলা দুদকে চলমান) আমলে তিনি নিয়োগ পান। এরপর নাসিরউদ্দিনের হাত ধরে তিনি সব নিয়ম পায়ে মাড়িয়ে ২ মাস ৮ দিনে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। তার প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ ছিল কি নাÑ সে বিষয়ে দায়িত্বশীল কেউ জানাতে পারেননি।

গোবিপ্রবির রেজিস্ট্রার দপ্তরের বিভিন্ন শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রবিশন পিরিয়ড শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ শিক্ষানবিশ থাকা অবস্থায় আপগ্রেডেশন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে তার আপগ্রেডেশন নিয়ে সহকারী অধ্যাপক হওয়া ছিল অবৈধ ও অনৈতিক। অনৈতিক পন্থায় পদোন্নতি নেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির মাধ্যমে তিনি যে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করেছেন তা ফেরত নেওয়ার বিধান রয়েছে। আইন বিভাগের শিক্ষক হয়েও আইন লঙ্ঘনে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। 

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ আসলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

তবে এখানেই থেমে নেই রাজিউর রহমান। তিনি সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আপগ্রেডেশন নীতিমালা এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়/ইনস্টিটিউট থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চার বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ মোট সাত বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা/গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথচ সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি নেওয়ার ক্ষেত্রে তার চাকরিকাল সাত বছর পূর্ণ হয়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, রাজিউর রহমান গোবিপ্রবির আইন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন ২০১৬ সালের ১৯ জুন এবং সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে আপগ্রেডেশন পান ২৫ এপ্রিল ২০২১ সালে। অর্থাৎ লেকচারার থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে তার অভিজ্ঞতা ছিল মোট ৪ বছর ১০ মাস ৬ দিন। এ ছাড়া তার বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা যুক্ত করা হয় ২ বছর। ফলে সব মিলিয়ে তিনি ৬ বছর ১০ মাস ৬ দিনে পদোন্নতি পান।

তবে এই পদোন্নতি নিতেও তিনি করেছেন বড় আরেকটি অনিয়ম। গোবিপ্রবির ৩৮তম রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। উক্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। গোবিপ্রবির ৩৮তম রিজেন্ট বোর্ডে স্পষ্ট করে বলা হয়, প্রার্থী যে পদে আপগ্রেডেশন/নিয়োগ প্রাপ্তি প্রত্যাশা করেন সে পদের পূর্ববর্তী পদের জন্য নির্ধারিত সময়কাল/চাকরিকাল অবশ্যই পূরণ করতে হবে এবং প্রথম আপগ্রেডেশন প্রাপ্তির পর দ্বিতীয় বা তদূর্ধ্ব আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে শুধু বর্তমানে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের চাকরিকালই গণনাযোগ্য হবে মর্মে কমিটি সুপারিশ করছে। উক্ত সুপারিশ শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী সবার জন্য প্রযোজ্য হবে।

অভিযোগ রয়েছে, রাজিউর রহমানের শিক্ষক কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মন্ডলের ছেলে সরফরাজ মন্ডল গোবিপ্রবির কলা অনুষদে ২০১৭-১৮ সেশনে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কিন্তু তাকে কোনো কোটা না থাকার পরও পোষ্য কোটায় ভর্তি করানো হয়। কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গোবিপ্রবিতে পোষ্য কোটা দেখিয়ে ভর্তি করানোর মতো অনিয়মে জড়িত ছিলেন রাজিউর রহমান। সরফরাজ মন্ডলের স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে নাম ছিল রাজিউর রহমানের। 

শুধু তাই নয়, সরফরাজ সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি পরীক্ষা দিলেও রাজিউর ম্যাজিকে ভর্তির সুযোগ পান আইন বিভাগে। কলা অনুষদের শিক্ষার্থী কীভাবে আইন অনুষদে ভর্তি হনÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে বের হয়ে আসে ভয়ংকর তথ্য।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রাজিউর রহমান কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনার সময় থেকেই তার শিক্ষক শাহজাহান মন্ডলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই সূত্রে নিজ শিক্ষকের ছেলেকে পোষ্য কোটায় ভর্তি করিয়ে নেন কোটা না থাকার পরও। এমনকি প্রভাব খাটিয়ে অন্য অনুষদে পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীকে আইন বিভাগে ভর্তি করিয়ে নেন। 

কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহজাহান মন্ডলের কাছে জানতে চাওয়া হয় আইন অনুযায়ী তার ছেলে গোবিপ্রবিতে পোষ্য কোটা পান কি না। এ বিষয়ে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সে মেরিটে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। তারপর আবেদন করে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। তাকে কীভাবে ভর্তি করানো হয়েছে সেটা ওই বিশ^বিদ্যালয়ের ওই সময়ের ভিসি বলতে পারবেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিউর রহমান বলেন, আমি গোপালগঞ্জে যোগদানের আগে ড্যাফোডিল বিশ^বিদ্যালয়ের চার বছর শিক্ষকতা করেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমাকে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তখনকার সময় আরও অনেক শিক্ষককে এভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপকে পদোন্নতিও নিয়ম মেনে হয়েছে।

সরফরাজ মন্ডলের ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, সে ভর্তির সময় আমাকে স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে দিয়েছে এটা সত্য। প্রথমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও পরে আইন বিভাগে কীভাবে ভর্তি করানো হয়েছে তা আমার জানা নেই। পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়টিও আমি বলতে পারব না। ডিন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী কোনো বিভাগে ভর্তি হতে পারবে না। ওই সময় তারা কীভাবে ভর্তি করিয়েছেন সেটা তারাই বলতে পারবেন। এদিকে তার বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিল্টন শেখ। 

সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ রকম অনিয়মের ঘটনা ঘটে থাকলে তা দুঃখজনক। কেউ অভিযোগ করলে আমি তদন্ত করে খতিয়ে দেখব এবং ব্যবস্থা নেব।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!