শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

৩৫ বছর ধরে ঘানি টানার সংগ্রাম

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

৩৫ বছর ধরে ঘানি  টানার সংগ্রাম

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারি গ্রামে মোস্তাকিন আলীর জীবন যেন চলচ্চিত্র ‘ঘানি’-এর বাস্তব রূপ। পার্থক্য শুধু, এখানে কোনো পরিচালক ক্যামেরাবন্দি করেননি; কাহিনিটি লিখেছে বাস্তবের কঠিন জীবন।

৬৫ বছর বয়সে এসে হাঁপ ধরা শরীর আর টান সামলায় না মোস্তাকিন। তবু তিনি থামেননি। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে সংসার চালাচ্ছেন কাঠের ঘানি টানেই। গরু কেনার সামর্থ্য না থাকায় শরীরকেই বানিয়েছেন বলদ হিসেবে। পাশে আছেন স্ত্রী ছকিনা বেগম। দুজনে মিলে বছরের পর বছর, দিনের পর দিন বেঁচে আছেন ঘামের বিনিময়ে।

প্রতিদিন ভোরে মোস্তাকিন আলীর দিন শুরু হয় সরিষা সংগ্রহ দিয়ে। আশপাশের গ্রাম ঘুরে ৭০ টাকা কেজি দরে সরিষা কিনে আনেন। দুপুরে ঘরে ফিরেই টানতে শুরু করেন ঘানি। কাঠের চাকায় সরিষা ভেঙে বের হয় তেল, আর ফেলে রাখা খৈল হয় গরুর খাবার। দিনে প্রায় পাঁচ কেজি সরিষা ভাঙেন, তাতে মেলে মাত্র সোয়া লিটার তেল ও তিন কেজি খৈল। বিকেলে বাজারে তেল বিক্রি করে হাতে আসে দুই থেকে আড়াইশ টাকা। এই অল্প টাকাতেই চলে তাদের সংসার, তিনবেলা ভাত ও প্রয়োজনীয় ওষুধ।

মোস্তাকিন আলী বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ঘানি টানতাম। এরপর থেকে একটানা ৩৫ বছর ধরে এভাবেই সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু বয়সের কারণে শরীর আর সায় দেয় না। হাঁপিয়ে যাই। যদি একটা গরু থাকত, তাহলে ঘানি চালানো অনেক সহজ হতো। কিন্তু সে সাধ্য নেই।’

স্ত্রী ছকিনা বেগমও বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে আমি বুক দিয়ে ঘানি টানি। এখন বয়স হয়েছে, শরীরে আর আগের মতো শক্তি নেই। অনেক সময় তিনবেলা খাওয়াই জোটে না। একটা গরু পেলে কষ্টটা অনেকটাই কমত।’

স্থানীয়রা জানালেন, বহু বছর ধরে এ দম্পতিকে এভাবেই ঘানি টেনে বাঁচতে দেখেছেন। প্রতিবেশী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সবচেয়ে অভাবী পরিবার এরা। মাঝে মাঝে সাহায্য করি, কিন্তু যদি একটা গরু কেউ দিত, তাহলে তাদের জীবন পাল্টে যেত।’

স্থানীয় প্রশাসনও মানবিকভাবে পাশে দাঁড়াতে চায়। কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুতই তাদের সরকারি সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা করব।’

পর্দায় দেখা ‘ঘানি’ হয়তো ছিল রূপক, কিন্তু মোস্তাকিন আলীর গল্প নিছক কোনো কাহিনি নয়। এটি জীবনের নিরেট সত্য-যে সত্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে মনে করিয়ে দেয়, দারিদ্র্যের ভার বইতে হয় বুকের জোরে, আর মানবিক সহায়তার স্পর্শই পারে সেই কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!