রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার বনকিশোর গ্রামের মিঠুন দাস (২৮) ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পেরে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে জীবন শেষ করেছেন। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পরিবারকে অতিরিক্ত আর্থিক ও মানসিক চাপের মুখে ফেলে গেছেন।
মিঠুন দাসের মা শ্রীমতি রানী ও স্ত্রী বিউটি দাস বর্তমানে চরম বেকায়দায় রয়েছেন। মিঠুনের ঋণ প্রায় ৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংসারের ব্যয় নির্বাহের জন্য তিনি সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যবসা ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির চাকরি করতেন। তবে তার উপার্জনের অধিকাংশই ঋণের সুদ দিতে হতো।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিঠুন দাউদকান্দিতে তিনটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ ছাড়া তার মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্য ননদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, আর একটি সংস্থা থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ব্যবসার জন্য তিনি সুদের ওপর ৫০ হাজার টাকাও ধার নেন। কোম্পানির চাকরির সময় তার ব্যাগ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মিঠুন।
মিঠুন গত বুধবার ফেসবুকে লাইভে এসে নিজের দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। তবে আমি চাই, আমার পরিবারকে ঋণমুক্ত করা হোক। তাদের শেষ হতে দেওয়া হোক না।’
মিঠুনের মা শ্রীমতি রানী বলেন, ‘আমার আর কোনো শক্তি নেই। ছেলে ছাড়া সংসার চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। মাথার ওপর এতগুলো ঋণ, আমার বাকি জীবন কীভাবে চলবে?’ স্ত্রী বিউটি দাস বলেন, ‘মিঠুন শেষবার ফোনে বলেছিল চট্টগ্রামে আছে। আর কথা হলো না। এখন ঋণের বোঝা কে টানবে, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’
মিঠুনের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়; এটি আমাদের সমাজের আর্থিক ও মানসিক চাপের এক করুণ প্রতিফলন। একটি পরিবারকে ঋণের বোঝা কতটা নিঃসাহায় ফেলতে পারে তা এই ঘটনাই স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে।
মিঠুনের লাশ রাজশাহীর চারঘাটে রাতেই বড়াল নদীর তীরে দাফন করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঋণ ও মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে তিনি জীবনের এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন