নেত্রকোনা শহরের নাগড়া আনন্দবাজার এলাকায় বসবাস করেন রাজন মিয়া (২৬)। রাজন মিয়া ও তার স্ত্রী সুমি আক্তার (২০) দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় যমজ সন্তান। কিন্তু অভাবের কারণে তাদের আড়াই মাস বয়সি যমজ সন্তান বিক্রি করে দিচ্ছেন। দামও প্রায় ঠিক হয়ে গেছে। বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মীরা জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন।
খবরটি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের দ্রুত হস্তক্ষেপে রক্ষা পায় শিশুদ্বয়। জেলা প্রশাসক হতদরিদ্র পরিবারটির পাশে দাঁড়ান, সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। ফলে আর সন্তান বিক্রি হয়নি।
গত বুধবার জেলা প্রশাসক বিষয়টি জানতে পেরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাফিকুজ্জামান ও সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক শাহ আলমকে নিয়ে রাজন মিয়ার বাড়ি পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে পরিবারটির দারিদ্র্যের চিত্র প্রত্যক্ষ করেন তিনি। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিকভাবে নবজাতক যমজের জন্য দুধ ও খাদ্যসামগ্রী, পরিবারের জন্য শুকনা খাবার ও নগদ অর্থ প্রদান করেন। পাশাপাশি বড় সন্তানকে নেত্রকোনা শিশু পরিবারে (বালক) লালন-পালনের জন্য পাঠানোর পরামর্শ দেন।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজন মিয়ার পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে ঘর মেরামত, সংসার চালাতে সহায়তা ও একটি রিকশা কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজন মিয়া বলেন, ‘কাজকাম নাই। খিদা তো আর চুপ করে থাহে না। অভাবের সংসারে কোনো রকমে খাইয়া, না খাইয়া থাকতে হয়। সুমির বুকে দুধ না আওনে বাইরে থাইক্কা বাচ্চাদের দুধ কিনতে হয়। ঘরে খাওন নাই, ঋণের চাপÑ তাই ভাবছিলাম বাচ্চা দুইটারে পালক দিয়া দিয়াম। সড়ক বিভাগের এক লোক তিন লাখ টাকা কইছিল। কিন্তু পরে আর দেই নাই। বাচ্চাটিরে আমার মায়া লাগে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘বিষয়টি শোনার পর আমি সেখানে যাই। কিছু শুকনা খাবার, দুই কৌটা দুধ, কিছু চিপস, বিস্কুট ও কিছু নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। অনেক বুঝিয়ে ছয় বছর বয়সি ছেলেটিকে সরকারি শিশু পরিবারে দিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি করিয়েছি। বাবা-মা দুজনেই কথা দিয়েছেন, তারা আর বাচ্চা বিক্রির কথা ভাববেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা ঘরটি মেরামতের জন্য টিন চেয়েছেন, দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। একটি রিকশা চেয়েছেন, তা-ও দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আশা করি, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ওই দম্পতির দুঃখভরা জীবনের অবসান ঘটাতে পারব।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন