জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে কাঠারবিল-সানন্দবাড়ি আঞ্চলিক সড়কের লংকারচর সকালবাজার অংশের ৭৫ মিটার সড়ক সংস্কারকাজ ৯ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধে একপক্ষ বহাল চায় আগের সড়ক, আরেক পক্ষের দাবি সোজা নতুন সড়ক। বাঁকা-সোজার দ্বন্দে এক পক্ষের বাধায় আটকে আছে সড়কটির সংস্কার কাজ। ফলে ভোগান্তিতে এলাকাবাসীসহ ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী দূরদূরান্তের মানুষ।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কাঠারবিল-সানন্দবাড়ি সড়কের সংস্কারকাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স দুর্গা এন্টারপ্রাইজ’। উত্তরের রৌমারি, রাজীবপুর ও সানন্দবাড়ি থেকে উপজেলা সদরের যাতায়াতের অন্যতম সড়ক এটি। সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু সকালবাজারের বিরোধপূর্ণ স্থানে কাজ করতে গেলে হাসান মাহমুদ পক্ষের বাধা আসে। তখন থেকে বন্ধ ওই অংশের সংস্কারকাজ।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সকালবাজার এলাকায় আগের বাঁকানো সড়কে ঘর তোলা হয়েছে। বর্তমানে সোজা সড়ক চলাচল করছে যানবাহন ও এলাকাবাসী। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সড়ক কাদায় ভরে গিয়ে একেবারে চলাচলের অনুপযোগী। তাতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে যানবাহন, পথচারী ও বাজারের লোকজন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. মঞ্জু হোসেন বলেন, ‘এলজিইডির নির্দেশেই সড়কের কাজটি শুরু হয়েছিল। বাধার মুখে সকালবাজার অংশের ৮২ গজ সড়কের কাজ করা যায়নি। এক পক্ষ বলছে আগের সড়ক সংস্কার করতে, আরেক পক্ষ বলছে সোজা নতুন করে করতে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কর কাজ স্থগিত থাকায় আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’
স্থানীয়রা বলেন, ‘লংকারচর সকালবাজারের জমির মালিকানা নিয়ে হাসান গ্রুপ ও আমানত গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ কয়েক বছর ধরে। সেই সঙ্গে দ্বন্দ মূলত সড়ক বাঁকা অথবা সোজার পক্ষ নিয়ে। ওই বিরোধে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে কয়েকবার। মীমাংসার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে অনেকবার সালিস-বৈঠক হয়েছে। এমনকি প্রশাসনের মধ্যস্থতায়ও বিরোধের মীমাংসা হয়নি। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবার শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।’
আগের সড়ক সংস্কারের পক্ষে মো. আমানত আলী বলেন, সকালবাজারের বাঁকানো সড়কটি বহু পুরাতন। হাসান পক্ষ পেশিশক্তির মাধ্যমে ওই সড়কর কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আগের সড়কে ঘর তুলে সংস্কারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এখন তারা নতুন করে যে সোজা সড়ক করতে বলছে সেটা কবরস্থানের ওপর দিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করা হয়েছিল। এরই মধ্যে আদালত আগের সড়কের অবৈধ স্থাপনা অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডি তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে।
অন্যদিকে নতুন সোজা সড়কর পক্ষে হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আগের বাঁকানো সড়কটি সোজা করা হলে কয়েকটি পরিবারের দ্বন্দ্ব নিরসন হয়। দুই সীমানার মাঝ বরাবর সড়ক সোজা করলে আর কোন বিরোধ থাকবে না। এ কারণে আমরা সোজা সড়ক চাচ্ছি।’
এলজিইডির দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘লংকারচর সকালবাজারের ৭৫ মিটার সড়কের সংস্কারকাজে বাধা আসায় কাজটি বন্ধ আছে। মীমাংসার জন্য দুপক্ষের সঙ্গেই কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চলছে। এতে বরাদ্দ রয়েছে কেবল সড়ক সংস্কারের। সে মোতাবেক আগের বাঁকানো সড়ক মেরামত করতে পারবে এলজিইডি। নতুন করে করার বরাদ্দ নেই।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন