- বিচার না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছে প্রতিবাদকারী ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’
- গতকাল দুপুর ২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক
খাগড়াছড়িতে স্কুলশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার দুপুর ২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। এর আগে এক পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে ‘জুম্ম-ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে গতকাল দিনব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। বিচার না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল শনিবার ভোর ৫টায় অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকালে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা।
গতকাল সকালে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ঘুরে দেখা যায়, অবরোধের কারণে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করেনি। পর্যটকবাহী জিপসহ অন্যান্য যানবাহনের চলাচলও বন্ধ ছিল। তবে শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, অবরোধের সমর্থনে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের চেঙ্গী সেতু এলাকা, স্বনির্ভর এলাকা; খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের পেরাছড়া, টেকনিক্যাল স্কুল, ভাইবোনছড়া, গাছবাগান; খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল, ৯ মাইল; খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কের মহালছড়ি ২৪ মাইল, সিঙ্গিবালাসহ বিভিন্ন স্থানে সকালে সড়কে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এর মধ্যে কিছু স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলা হয়। কোথাও আবার টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অবরোধকারীরা। কিছু স্থানে পুলিশ গিয়ে সড়ক থেকে পোড়া টায়ার ও গাছের গুঁড়ি সরিয়ে নেয়। এ ছাড়া আলুটিলায় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের শিকার হয়। বেড়াতে আসা পর্যটকরাও বিপাকে পড়েন। অনেকে সাজেক ফেরার পথে সড়কেই আটকে আছেন।
তবে দুপুরে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন।
সংঘর্ষের পর খাগড়াছড়ির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৪৪ ধারা জারির আদেশ দেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং জনগণের জান ও মালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৪৪ ধারা জারির আদেশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ (গতকাল) দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় এই আদেশ জারি করা হয়। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ওই কিশোরীর বাবা বলেন, তার মেয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়তে যেত আর রাত ৯টায় বাসায় ফিরত। এটাই ছিল নিয়মিত রুটিন। তবে মঙ্গলবার ৯টার দিকে না ফেরায় তারা ওই শিক্ষকের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, অন্য দিনের সময়সূচি অনুযায়ী প্রাইভেট ছুটি হয়েছে। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আশপাশের এলাকায় খুঁজতে থাকেন তারা। একপর্যায়ের রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে একটি ফসলের খেতে পাওয়া যায়। পরে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন