নরসিংদীর নতুন বাসটার্মিনাল এলাকায় নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের দুই পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে করে সড়কের উভয় পাশে তৈরি হয়েছে বিশাল ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধে হাঁসফাঁস করছে পথচারী ও এলাকাবাসী। এ কারণে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়ছে। সড়ক ব্যবহারকারীরা এই সমস্যার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
জানা যায়, ১৯৭২ সালে নরসিংদী পৌরসভা গঠিত হলেও প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পায় ১৯৯৬ সালে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে এখনো পিছিয়ে রয়েছে এই পৌরসভা। ১০.৩২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় প্রায় ২ লাখ মানুষের বসবাস। এখানে প্রতিদিন গড়ে ২১০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হলেও সেগুলো অপসারণের জন্য নেই কোনো আধুনিক ও বড় ধরনের ডাম্পিং স্টেশন। যে ডাম্পিং স্টেশনটি আছে তা ইতিমধ্যেই ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে শহরের নতুন বাসটার্মিনাল এলাকার নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের উভয় পাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে করে সড়কের উভয় পাশে গড়ে উঠেছে বিশাল ময়লার ভাগাড়।
ফলে এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পথচারী, শিক্ষার্থী এবং যানবাহনের যাত্রীরা পড়েছে চরম বেকায়দায়। নাকে রুমাল, মাক্স দিয়ে মুখ ঢেকেও দুর্গন্ধ ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে এ ময়লার আবর্জনার মধ্য দিয়েই তাদের চলাচল করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ওই সড়কের পাশে গড়ে উঠা শিল্প-কারখানা ও বসতবাড়ির লোকেরা ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাদের এখানে বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, ময়লা-আর্বজনার কারণে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়ছে।
পরিবেশ দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে ওই এলাকায় সাইনবোর্ড টানিয়ে ময়লা-আর্বজনা ফেলতে নিষেধ করছেন আমানত শাহ গ্রুপ। গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. হেলাল মিয়া জানান, ওই সড়কের পাশে আমানত শাহ গ্রুপের প্রায় ১০০ বিঘা জমি রয়েছে। এ জমিতে শিল্পকারখানা গড়ে তুলার জন্য ইতিমধ্যে শেডও নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার সব ময়লা-আবর্জনা এখানে ফেলা হচ্ছে। প্রায় আধা কিলোমিটার জমিতে ময়লা ফেলে বিরাট স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ফলে এখানকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এখানে কারখানা গড়ে তোলা তো দূরের কথা, দুর্গন্ধে ওই এলাকার কাছেই যাওয়া যায় না। ময়লা-আবর্জনার কারণে নিজস্ব জমিতে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে আমানত শাহ গ্রুপ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার পৌর প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করেছেন। প্রতিবারই পৌর প্রশাসক ময়লা সরিয়ে ফেলার আশ^াস দিচ্ছেন। অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সড়কের পাশের বাড়ির মালিক মো. ইমাম হোসেন জানান, ময়লা-আবর্জনার গন্ধে এখানকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। ঘর থেকে বের হতে হলে মুখে এবং নাকে রুমাল চেপে বের হতে হয়। অতিদ্রুত এখান থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ফেলার জন্য পৌর প্রশাসকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও নরসিংদী পৌরসভার প্রশাসক মনোয়ার হোসেন জানান, নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের ৫ নম্বর ব্রিজের পাশে পৌরসভার ৩ একর জমিতে একটি ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে। সেটি ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। কিন্তু যে পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা জমছে সেই তুলনায় ডাম্পিং স্টেশনটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ওই সড়কের উভয় পাশে সরকারি জায়গায় আপাতত ময়লা ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ২১ কোটি ব্যয়ে একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে টেন্ডারও আহ্বান করা হয়েছে। শুধু ওয়ার্কঅর্ডার বাকি রয়েছে। এটি হয়ে গেলেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন