নারী ওয়ানডে বিশ^কাপে ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে লড়াকু ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। দারুণ সম্ভাবনাও তৈরি করেছিল তারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে পারফরম্যান্স দেখালেন বাংলাদেশের মেয়েরা, তাতে যেকোনো দলকে এখন তারা চ্যালেঞ্জ জানাতেই পারেন। বাংলাদেশ নারী দলের অলরাউন্ডার ফাহিমা খাতুন দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করেন, তারা যেকোনো দলের সঙ্গে সমান তালে লড়তে পারেন। তাদের আর হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
বিশ^কাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে চারবারের বিশ^চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭৮ রানের পুঁজি নিয়েও ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। ১০৩ রানে ফেলে দিয়েছিল ইংল্যান্ডের ষষ্ঠ উইকেট। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান অভিজ্ঞ ব্যাটার হিদার নাইট। তাকে আউট করতে পারলে খেলার ফল ভিন্ন হতে পারত। ম্যাচ শেষে ফাহিমা বলেন, ‘আমরা হিদার নাইটের উইকেটটা পাওয়ার জন্য খুব চেষ্টা করছিলাম। কারণ, ওকে যদি সেই সময় আউট করতে পারতাম, তাহলে খেলার ফল অনেকটা অন্যরকম হতে পারত।’
ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ ব্যাটার নাইট ১১১ বলে অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন। শুরুতে চাপ সামলে ধীরে ধীরে রান তাড়া সম্পন্ন করেন। দেখান, কীভাবে ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ইনিংস গড়ে তুলতে হয়। তার ইনিংসই শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে রক্ষা করে এবং তাদের বিশ্বকাপে অপরাজিত থাকার ধারাও বজায় রাখে। তবু এই হার বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে কোনো আঘাত আনেনি। টুর্নামেন্টে এক জয়, এক হার নিয়ে তারা এখনো সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে আছে।
দুই রাউন্ড শেষে বাংলাদেশ পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে আছে এবং তারা এখনো বিশ^াস করে, যেকোনো দলকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে তারা। ফাহিমা বলেন, ‘আমরা (বিশ^কাপ) ভালোভাবে শুরু করেছি, প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছি। তাই আত্মবিশ্বাস ছিল অনেক বেশি। আজ আমরা হয়তো ২০-৩০ রান কম করেছি। কিন্তু যদি এই ধারাটা ধরে রাখতে পারি, তাহলে কোনো দলই আমাদের সহজভাবে নিতে পারবে না। আমরা শুধু ভালো খেলতে আসিনি, জেতার লক্ষ্য নিয়েই এসেছিÑ প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন। কাউকে শ্রেষ্ঠ ভাবব না, নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলব এবং সেদিনের মতো সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার চেষ্টা করব। ফল আমাদের দিকেই আসবে।’ বাংলাদেশের অলরাউন্ডার ফাহিমা খাতুন জানেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের জয় পাওয়া খুবই কাছাকাছি ছিল।
বল হাতে তিন উইকেট নিয়ে ফাহিমাই ছিলেন দলের সেরা বোলারÑ ১০ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট। ১৭৮ রানের সংগ্রহ তাদের কাছে প্রতিরোধযোগ্য মনে হয়েছিল, কিন্তু ২৩তম ওভারে ইংল্যান্ডের স্কোর যখন ৭৮/৫, তখনো তারা ম্যাচে ছিল। এরপর অ্যালিস ক্যাপসি (৩৪ বলে ২০) ও চার্লি ডিন (৫৬ বলে অপরাজিত ২৭) ধীরে ধীরে ম্যাচটি ইংল্যান্ডের দিকে নিয়ে যান, ৪ ওভার বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করেন। ফাহিমা বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম যে আমাদের স্কোর জেতার মতোই। আমরা সেটা ডিফেন্ড করব, কারণ আমাদের বোলিং ইউনিটের ওপর আস্থা ছিল।
টিম ম্যানেজমেন্টও সেটা বিশ্বাস করেছিল। সেটাই আমাদের অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে। চার্লি ডিন যখন উইকেটে আসে, আমি বলব সে দারুণ খেলেছে। তবে আমরা কিছু বল মিস করেছি, যেগুলো বাউন্ডারিতে গেছে। তখন কিছুটা চাপ তৈরি হয়। তবু আমি অধিনায়ক ও সতীর্থদের বলছিলাম, যদি আমরা চারটা ম্যাজিক্যাল বল করতে পারি, তাহলে ম্যাচ আমাদের। কারণ ক্রিকেটে যেকোনো কিছুই হতে পারে। শেষ রান পর্যন্ত আমাদের সুযোগ ছিল।’
এদিকে, প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ-সেরার পুরস্কার পাওয়া মারুফা আক্তার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫ ওভার বল করেন। বাংলাদেশের ফিল্ডিং ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি মাঠের বাইরে ছিলেন। তবে সতীর্থদের মতে, পরিস্থিতি গুরুতর নয়। ফাহিমা বলেন, ‘তার কিছু ক্যাম্পিং সমস্যা হচ্ছিল। এখন সে ভালো আছে, অনেকটাই ঠিক হয়ে গেছে। আমি মনে করি, এটা আমাদের হারের অন্যতম কারণ। যদি ও আরও দুই-তিন ওভার বল করতে পারত, তাহলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। আমরা ওকে অনেক মিস করেছি।’ বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ শুক্রবার, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন