নেত্রকোনায় সংবাদ প্রকাশের জেরে তিন সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বিএনপির এক নেতা। গত শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এই হুমকি দেন। সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বিএনপি নেতার দেওয়া বক্তব্য সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মদন পৌর বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান চন্দন কালের কণ্ঠ পত্রিকার নেত্রকোনার আঞ্চলিক প্রতিনিধি ফয়েজ আহম্মেদ (হৃদয়), আমার দেশ পত্রিকার মদন উপজেলা প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিন ও দৈনিক যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি তোফাজ্জল হোসেনকে এই হুমকি দেন।
স্থানীয় মদন পৌরসভা কার্যালয় ও উপজেলা প্রেসক্লাব সূত্র জানায়, সম্প্রতি উপজেলার একটি সড়কের সংস্কারকাজ শেষ হয়। মান ঠিক না রেখে সড়কের কাজ শেষ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ প্রকাশ করলে ক্ষেপে যান ঠিকাদারসহ বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী। গত বৃহস্পতিবার ঠিকাদারের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল রোমান তিন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এ ছাড়া সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বিকেলে পৌরসভার দেওয়ানবাজার রোড এলাকায় ‘মদন পৌরবাসীর’ আয়োজনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়।
মানববন্ধনে দেওয়া বক্তব্য মদন পৌর বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন। প্রায় দেড় মিনিটের বক্তব্যে তিনি ওই তিন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাইÑ এই হৃদয়, নিজাম, তোফাজ্জলদের যে চাঁদাবাজির চিন্তাভাবনা ছেড়ে দিয়ে ভালো হয়ে যাও। আমরা কিন্তু এ দেশে ভালো মানুষ না খুব একটা। আমরাও কিন্তু অনেক কিছু পারি। কিন্তু আমরা নিজেকে শিক্ষিত মনে করে, ভদ্র মনে করে ভালো হয়ে গেছি। তাই আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই নিজাম, হৃদয়কে; ভবিষ্যতে আর যদি এটা নিয়ে কিছু করা হয়, প্রয়োজনে হাত কেটে দেওয়া হবে।’ এ সময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা করতালি দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ ঘটনায় ওই তিন সাংবাদিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও আমার দেশ পত্রিকার নেত্রকোনা প্রতিনিধি মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এভাবে মানববন্ধন করে বিএনপির এক নেতা প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিতে পারেন না। আশা করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি দেখবে। একই সঙ্গে সড়কে দুর্নীতির অভিযোগ দুদককে তদন্ত করার আহ্বান জানাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান আজ শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘রাস্তার কাজ হচ্ছিল, সেখানে গিয়ে সাংবাদিকেরা নাকি টাকা চেয়েছিল, শুনেছি। নিউজ করায় অনেক মানুষ ক্ষেপে গিয়েছিল। যদি পৌরসভার চলমান প্রকল্পগুলো বাতিল হয়ে যায়, তাহলে তো সমস্যা। তাই মানুষের রাগ প্রশমিত করার জন্য বক্তব্য দিতে গিয়ে হাত কেটে নেওয়ার বক্তব্যটি চলে এসেছে। এলাকার মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এভাবে বলতে হয়েছে। এটা আমি রাগ বা মন থেকে বলিনি। ওরা (সাংবাদিকেরা) আমার ছোট ভাই। এখন বুঝতে পেরেছি, এতটা বলা ঠিক হয়নি। আপনারা বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান করবেন আশা করি।’