আইসিসি নারী বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স দেখালেও নিউজিল্যান্ড ম্যাচে বাস্তবতা দেখেছে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য কিউইদের দেওয়া ২২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১২৭ রানেই অলআউট হয়ে যায় নিগার সুলতানার দল। ঠিক ১০০ রানের বড় হারের হতাশায় পুড়েছে তারা। তাদের ব্যাটিংয়ে দৈন্য দেখা গেছে। বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। প্রথম পাঁচ ব্যাটার ব্যক্তিগত রান দুই অঙ্কের ঘরেই নিয়ে যেতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটিং ধ্বংসস্তূপে রূপ নেয়। ব্যাটিং-ধসই বাংলাদেশকে বেশি ভোগাচ্ছে বলে মনে করেন বোলিংয়ে সেরার পারফরম্যান্স উপহার দেওয়ান রাবেয়া খান।
কিউইদের কাছে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে স্পিনার রাবেয়া ব্যাটিং বিপর্যয়কেই হারের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা (অধারাবাহিক ব্যাটিংয়ের কারণ) আসলে ব্যাটারদেরই জিজ্ঞেস করা উচিত। লোয়ার অর্ডারে যারা ব্যাট করে, তাদের জন্য আসলে যত ভালোই করুক, ওপর থেকে রান না এলে ভালো করা কঠিন। উইকেট সেইমই ছিল, আমরা খেলতে পারিনি, এটা হচ্ছে বড় কথা। উইকেট একই (গত ম্যাচের মতো) ছিল।’ রাবেয়া আরও বলেন, ‘গত দুই ম্যাচে আমরা হেরেছি। ব্যাটিং কলাপ্সটাই বেশি ভোগাচ্ছে আমাদের। বোলিং, ফিল্ডিং ঠিকঠাক হচ্ছে, এটা ধরে রাখতে হবে। কিন্তু ব্যাটিংয়ের শুরুতে অনেক উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। ফাহিমা খাতুন এবং আমি মিলে সিঙ্গেল খেলার চেষ্টা করেছি, কিছু রান তুলেছি। আমরা বলতেছিলাম, যত সিঙ্গেল নেব এখন, পরে কাভার করতে পারব। বড় শট খেলতে পারছিলাম না উইকেট পড়ে যাওয়ার কারণে।’ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের অন্যতম ভরসার নাম ছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। কিন্তু এই বিশ^কাপে সেভাবে কিছু করতে পারছেন না তিনি। অধিনায়কের এই ব্যাটিংয়ে অফ ফর্ম প্রসঙ্গে রাবেয়া বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে জ্যোতি আপু রান পাচ্ছে না। তিনি আত্মবিশ্বাসী আছেন, তবে রান পাচ্ছেন না।’
এদিকে, দলের বিপর্যস্ত পারফরম্যান্সের দায় ব্যাটারদের ওপর দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমরা শেষ ম্যাচে ভালো যা কিছু করেছি, একই কাজ এই ম্যাচেও করতে চেয়েছি। তবে ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা ধারাবাহিক নই। যখন ২০০ রানের বেশি তাড়া করছেন, অবশ্যই টপ অর্ডারদের ভালো করতে হবে, নইলে লক্ষ্যে পৌঁছা কঠিন। প্রথম ইনিংসে আমরা ভালো বল করেছি। তবে মারুফার (আক্তার) কাছ থেকে যেমনটা আশা করেছি, আজ তা পাইনি। অন্য বোলাররা দারুণ বল করেছে।’ যথারীতি এই ম্যাচেও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। তাদের প্রশংসা করার পাশাপাশি সোফি ডিভাইন এবং ব্রুক হ্যালিডের জুটি দ্রুত ভাঙতে না পারায় আক্ষেপ ঝরেছে নিগারের কণ্ঠে। এই দুজন মিলে গড়েন ১১২ রানের জুটি। নিগার বলেন, ‘স্পিনাররা তাদের কাজ ঠিকঠাক করেছে।
৩০ ওভার পর্যন্ত আমরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রেখেছি, কিন্তু এরপর তারা শট খেলেছে এবং আমরা বাউন্ডারি দিয়েছি বেশি। (ডিভাইন-হ্যালিডের জুটি ভাঙতে) বোলারদের সঠিক জায়গায় বল ফেলার পরিকল্পনা ছিল, যাতে তারা খুব একটা শট খেলার সুযোগ না পায়। বোলাররা তা বাস্তবায়নে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছে। তবে তারাও (নিউজিল্যান্ড) অভিজ্ঞ। সেটিকে কাজে লাগিয়ে সহজেই খেলেছে।’ নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর অবশ্য যথারীতি শিক্ষা নেওয়ার কথাই ফের অনুধাবন করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিগার বলেন, ‘এখান থেকে আমাদের অবশ্যই অনেক কিছু শেখার আছে।
দেখেছি, দলীয় রান ভালো জায়গায় নেওয়ার ক্ষেত্রে লোয়ার মিডল অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে শিখে আমাদেরও মিডল ও তার নিচের ব্যাটারদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে খেলতে হবে। আইসিসি ইভেন্টে আমাদের সেরা পারফর্ম করতে হবে। অন্যথায় তাদের বিপক্ষে আমরা লড়তে পারব না। আমাদের অভিজ্ঞতারও কমতি আছে।’