কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল থেকে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তালেবুর রহমান বলেন, গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর খিলক্ষেত, উত্তরা, বাড্ডা, বনানী, বিজয়নগর ও শেরেবাংলা নগর থানা এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল থেকে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ঝটিকা মিছিল থেকে ৩ হাজারের বেশি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঝটিকা মিছিল থেকে এ পর্যন্ত কতজন গ্রেপ্তার করা হয়েছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, চলতি বছরের আজকের দিন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশ্যই যারা সরাসরি মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকার বাইরে থেকে অনেকেই এসে এখানে মিছিল করার চেষ্টা করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য কিÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যাদের গ্রেপ্তার করেছি তারাসহ ইতোপূর্বে ঢাকার বাইরে থেকে অনেকেই এসে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করছে। এর পেছনে অনেকে অর্থায়ন করছে এবং প্রত্যেকটা মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকাও তাদের দেওয়া হচ্ছে। মূলত তাদের যে অবস্থানটা সেটা জানান দেওয়া এবং ঢাকা মহানগরীতে আতঙ্ক সৃষ্টি করার একটা অপচেষ্টা। মিছিলের ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের যে তৎপরতা আছে সেটা জানান দেওয়া।
একই দিনে ঢাকায় এত ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা, পুলিশ গণগ্রেপ্তারের দিকে এগোচ্ছে কি না? জানতে চাইলে তালেবুর রহমান বলেন, এটা আসলে গণগ্রেপ্তার বলা যাবে না। আমরা যে গ্রেপ্তারগুলো করছি একদম তাৎক্ষণিকভাবে ঝটিকা মিছিলে যাদের পাওয়া যাচ্ছে। আমরা গ্রেপ্তার করার পরে যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তাদের পূর্বাপর যে ইতিহাস সেটা যাচাই-বাছাই করে সন্তুষ্ট হলেই তাদের মামলায় চালান দেওয়া হচ্ছে।
ঝটিকা মিছিল থেকে হাতে নাতে ককটেলসহ অনেককে ধরা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য কাউকে আহত করা কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন আমরা একদিনে ২৪৪ জন আরেকদিন ১৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। মিছিলগুলো থেকে ককটেল বিস্ফোরণ করে জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করার একটা অপচেষ্টা করা হয়। অনেককেই আমরা ককটেলসহ গ্রেপ্তার করেছি। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণকে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। তবে যে অপতৎপরতা তারা চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা যেন না করতে পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। আর যারা ঢাকার বাইরে থেকে আসছে সে বিষয়ে আমরা নজরদারি করছি।
মিছিলে অংশ নিয়ে তারা কি পরিমাণ টাকা পাচ্ছে, কোনো তথ্য পেয়েছেন কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার খরচ, থাকা-খাওয়ার বাইরে একটা নির্দিষ্ট টাকা না হলে তো সে আসবে না। তো এই ক্ষেত্রে অনেকের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পেয়েছি। তাদের মোটিভেট করার জন্য বিভিন্নভাবে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো আমরা মাথায় রাখছি এবং যারা এই প্রণোদনাগুলো দিচ্ছেন, যারা আর্থিকভাবে সহায়তা করছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, যে গ্রেপ্তারগুলো হচ্ছে এর বেশির ভাগ কিন্তু ঢাকার বাইরে থেকে। এরা বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং থানা বা উপজেলা পর্যায়ের নেতা। এতেই প্রতীয়মান হয়, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঢাকা শহরে এসে ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টার উদ্দেশ্যে তাদের সংগঠিত করছে। যারা কো-অর্ডিনেট করছে তারাও আমাদের নজরের মধ্যে আছে। আপনারা জানেন নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক তৎপরতা আরেকটু বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন