রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন

পুলিশের বাধায় রণক্ষেত্র শাহবাগ, আহত ১২০

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

পুলিশের বাধায় রণক্ষেত্র  শাহবাগ, আহত ১২০

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিচার্জ ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার বিকেলে এ বাধার কারণে তারা শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ পালন করতে পারেননি। পুলিশের হামলায় রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে শাহবাগ। এ সময় শিক্ষক নেত্রী খায়রুন নাহার লিপিসহ অন্তত ১২০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও মিছিল থেকে ৫ জন শিক্ষকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ডিএমপি। এদিকে হামলার প্রতিবাদে আজ রোববার থেকে শহিদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। যদিও শিক্ষকদের ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে আনার যুক্তি নেই বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। এ মুহূর্তে শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক বলেও জানান তিনি।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, তিন দফা দাবিতে গতকাল সকালে সারা দেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। বিকেলে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পন’ কর্মসূচি পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় অনেক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আশ্রয় নেন।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, শহিদ মিনার থেকে শাহবাগ অভিমুখে পদযাত্রা ও প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরের জন্য কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে কলম সমর্পণের কর্মসূচি ছিল তাদের। গণগ্রন্থাগারের সামনে পুলিশ তাদের আটকে দিলে তারা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর লাঠিপেটার পাশাপাশি জলকামান ব্যবহার করে।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২০ জন শিক্ষক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে এসেছেন। অনেকেই জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। কিছু শিক্ষক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, পুলিশ বিনা উসকানিতে তাদের ওপর হামলা চালায়। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, শিক্ষকেরা বাধা উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে এগোতে চাইলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সদস্যরা পদক্ষেপ নেন। শিক্ষকদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে।

আহত শিক্ষক মারুফা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষকের হাতে কলম ছিল, তারা কেন রক্তাক্ত হলো?’ শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যারা এ দাবি যৌক্তিক মনে করে না। তাদের এই পদে থাকারও যৌক্তিকতা নাই। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।’ এই হামলাকে ন্যক্কারজনক বলেও জানান তিনি।

আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, ‘কলম সমর্পণ কর্মসূচি শেষে আমাদের শহিদ মিনারে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশি হামলায় শাহবাগে অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (আজ) রোববার শহিদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।’

গতকাল সন্ধ্যায় শহিদ মিনারে কর্মবিরতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাশেম-শাহিন) সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় ও যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত আগামীকাল (আজ রোববার) থেকে সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে। সারা দেশের শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, প্রত্যেক প্রধান শিক্ষক-সহকারী শিক্ষক সবাই শিক্ষকের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে কর্মবিরতি পালন করবেন।’

এদিকে শিক্ষকরা যে কথা বলে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন, তা রাখেননি বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। রাস্তা থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দেওয়ার পর ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের জানিয়েছিলেন, তারা অবস্থান কর্মসূচি করবেন। এরপর দাবি-দাওয়ার স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে যাবেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সহিংস মনোভাব দেখাচ্ছিলেন। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরিয়ে দিয়েছে। জনগণের ভোগান্তি দূর করতে রাস্তা ফাঁকা করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল বিকেলে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, ‘বিকেল ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের একাংশ পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পেরিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।’

শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

এদিকে গতকাল রোববার খুলনায় এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, দশম গ্রেডের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের এ আন্দোলন অযৌক্তিক।

তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ সহকারী শিক্ষক মনে করেন, দশম গ্রেডের এ দাবি যৌক্তিক নয়। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে তাদের দশম গ্রেডে আনা; এটি সম্ভব। তারা যেন ১১তম গ্রেড পেতে পারেন, সেজন্য আমরা কাজ করছি। তাদের এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াটাও যৌক্তিক নয়।’

শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘ওনারা যেহেতু স্বাধীন দেশের নাগরিক, ওনাদের কথা বলার সুযোগ আছে। ওনারা আন্দোলন করতে পারেন। কিন্তু আমরা যেটা দেখব, আমাদের পড়াশোনা যাতে বিঘিœত না হয়। এই ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেব, যদি আমাদের পড়াশোনা বিঘিœত হয়। আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনার মানের উন্নয়নের বিষয়টাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এই পর্যায়ে এসে যদি অযৌক্তিক দাবি দিয়ে কেউ পড়াশোনাকে বিঘিœত করে, সে জন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও তাদের বাকি দুই দাবি হলোÑ চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।  ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চার শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ ছাড়াও এ মোর্চায় আছে, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭। এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।

গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকেরা। পরে গত শনিবার থেকে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’।

এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন

এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না আসলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!