দশকের পর দশক ধরে সীমিত পরিসরে, সরাসরি ও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে দ্বন্দ্ব চলার পর গত সপ্তাহে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সংঘাত শুরু হয়। ইসরায়েলের অভিযোগ, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, যা তাদের জন্য হুমকি। তাই আত্মরক্ষায় ইসরায়েল ইরানে বিমান হামলা চালিয়েছে। জবাবে ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলা এখনো চলছে। গত শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের (এসপিআইইএফ) মূল অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার মতে, এ দুটি অঞ্চল এখন মারাত্মক সংঘর্ষের সম্ভাব্য কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সংঘর্ষের বিপুল আশঙ্কা লক্ষ করা যাচ্ছে। আমরা বৈশ্বিক যুদ্ধের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। সব সংকটেরই শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত।’
তিনি ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই জোট বারবার রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করছে। এটি পশ্চিমাদের উপনিবেশবাদী নীতির আরেকটি রূপমাত্র।’ পুতিন এ সময় দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, ইরানের বুশেহর পারমাণবিক স্থাপনায় রুশ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করবে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘ইসরাইল যদি সত্যিই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার কথা বিবেচনা করে থাকে, তবে আমি আশা করি এটি কেবল কথার কথা হিসেবেই থাকবে।’ এর আগে রুশ প্রেস সচিব দিমিত্রি পেসকভ সেন্ট পিটার্সবার্গের কনস্টান্টিন প্রাসাদে স্কাই নিউজকে বলেন, ‘ইরানে সরকার পরিবর্তনের কথা যারা বলছে, তারা যেন মনে রাখেÑ এটা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এতে দেশটিতে চরমপন্থার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।’
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘যারা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যা করার কথা বলছে, তারা যেন মনে রাখে, তাতে তারা এক ভয়ংকর প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবে।’ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গত শুক্রবারের বৈঠক পরিণত হয়েছিল এক উত্তপ্ত বাদানুবাদে। ইরান ও ইসরায়েল, তাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য দায় চাপাতে থাকে। বৈঠকে এ যুদ্ধ বন্ধ করা এবং কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানানো হলেও কীভাবে এগোনো উচিত, সে বিষয়ে পরিষদ কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। বৈঠকে দেওয়া বক্তৃতায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি ইসরায়েল ও এর মিত্রদের তেহরানে আগ্রাসনের সমর্থনে ‘অতর্কিত হামলা ও অস্তিত্বের হুমকি’র (ইরানের তরফে) যুক্তিকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের অজুহাত’ বলে বর্ণনা করেন। আমির সাঈদ ইসরায়েলকে এমন একটি দেশ হিসেবে আখ্যা দেন, যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে এবং অন্যান্য দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে। বক্তব্যের সময় ইসরায়েলি হামলায় নিহত শিশুদের ছবি তুলে ধরেন তিনি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্রদিমির পুতিন বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলকে বহুবার আশ্বস্ত করেছে রাশিয়া। শনিবার (২১ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেন, মস্কো বহুবার ইসরায়েলকে আশ্বস্ত করেছে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার জাতীয় গোয়েন্দাপ্রধান ভুল বলেছেন। কারণ এর আগে তিনি (গোয়েন্দাপ্রধান) মার্কিন কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেন যে ইরান পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে না। এ সপ্তাহে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানোভ আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতা করতে রাশিয়ার প্রস্তুতির কথা বারবার জানিয়ে এসেছেন। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে এমন অভিযোগ এনে গত ১৩ জুন ইরানে ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েল। এ নিয়ে টানা নবম দিনের মতো হামলা ও পাল্টা হামলা চলছে। এতে উভয় পক্ষের শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে। ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা তৈরি করেছে। আঞ্চলিক এই সংঘাতে বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোও জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্রদিমির পুতিন শুক্রবার রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নগরী সুমি দখলের চেষ্টার বিষয়টিকে ‘উড়িয়ে দিচ্ছেন না’। তার এই বক্তব্য মস্কো ও কিয়েভের শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে সন্দেহের উদ্রেক করেছে। সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে। ইউক্রেন বলেছে, পুতিনের মন্তব্য শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি ‘অবমাননার’ বহিঃপ্রকাশ। তিন বছরের সংঘাত অবসানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সম্প্রতি স্থবির হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের ওপর পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে মস্কোর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে শান্তি চুক্তি নস্যাৎ করার অভিযোগ করেছে কিয়েভ।