ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

বাঙালি দেখলেই ‘বাংলাদেশি’ বলে আটক! উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০১:০২ এএম

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে ফের তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ‘বাঙালি বনাম বাংলাদেশি’ ইস্যু। শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্য, পথসভা ও মিছিলের জেরে রাজ্যের একাধিক জেলায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ভারতের রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, আসাম, দিল্লির মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয় বাংলাভাষী শ্রমিক দেখলেই হেনস্থা করা হচ্ছে। বাংলা কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পুশইন করা হচ্ছে। এমনকি অবৈধ বাংলাদেশি বলে এনআরসি নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে জোরালো প্রতিবাদ জানাতে পথে নামছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সম্প্রতি কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিলে হাঁটেন মুখ্যমন্ত্রী।  শুধু শহরে নয়, মমতার নির্দেশ কলকাতাসহ রাজ্যের সবকটি জেলায় এ মিছিল করেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। গত সোমবার দলনেত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল ঘটা করে পালন করবে ‘শহিদ দিবস’। অনেকেই মনে করেছিলেন, শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকেই ‘ভিনরাজ্যে বাঙালি নিধন’ এর প্রসঙ্গ তুলতে পারেন দলনেত্রী। কিন্তু তাতে নারাজ নেত্রী। তবে মমতার এই পৃথক অনুষ্ঠান নেওয়াকে, যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এ নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের।

বাংলা ভাষা বললেই অপমান? ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর হুমকি? এটা কি ভারত? মন্ত্রীর দাবি, এনিয়ে বারবার কেন্দ্র সরকার এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দেওয়ার পরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিজেপি। পরিবর্তে যারা এ অন্যায় করছে, তাদের মদদ দিয়ে আসছে বিজেপি শাস্তি রাজ্যগুলো। যে কারণে প্রতিবাদের নামতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।

বাংলা এবং বাঙালিকে অপমানের জবাব পথে নেমেই দেবে তৃণমূল। বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা জেলার বাসিন্দা হওয়ায় বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনা, মালদা, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি জেলার শ্রমিকদের উচ্চারণ ও নাম অনেক সময় বাংলাদেশের মতো হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলাটা শুধু অপমান নয়, এটা জাতীয় সংহতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। হিন্দিভাষী হলে ভারতীয়, আর বাংলাভাষী হলে বাংলাদেশি এই মানসিকতা মেনে নেওয়া যায় না।’ বিজেপি সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাম্বিত পাত্রের দাবি, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ একটা বাস্তব সমস্যা। কেউ ভারতীয় হলে তার পক্ষে প্রমাণপত্র থাকা উচিত। রাজ্য সরকার নিজের দায়িত্ব না নিয়ে বিরোধীদের দোষ দিচ্ছে।’ পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের নাগরিকত্বের ছত্রছায়ায় রেখে ভোটব্যাংক তৈরি করছে। বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রকৃত বাঙালিদের হেনস্তা করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের হাতে সুবিধা তুলে দেওয়া হচ্ছে।

এই রাজ্যে এখন দুই শ্রেণি একদিকে দেশপ্রেমিক বাঙালি, আর একদিকে অবৈধ বাংলাদেশি।’ এই অভিযোগকে ‘জাতীয়তাবাদী বিভাজনের রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি বলেন, ‘যারা এ দেশে কাজ করে, বাঁচে তারা সবাই পশ্চিমবঙ্গের সন্তান। আপনি কে হবেন তা ধর্ম দিয়ে নয়, মনুষ্যত্ব দিয়ে বিচার করা উচিত। বিজেপি ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে মুসলিমবিরোধী রাজনীতি করছে। বাঙালি মানেই হিন্দু বা মুসলিম নয়। যারা মানুষের রুটি-রুজি কেড়ে নিয়ে ধর্ম বা জন্মভূমি নিয়ে রাজনীতি করছে, তারা প্রকৃত শত্রু।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলার প্রতিটি মানুষের পাশে আছি, তা সে মুর্শিদাবাদ হোক বা মেদিনীপুর।’ এনিয়ে আলিপুরদুয়ার, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও মালদা জেলার বিভিন্ন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এ ইস্যুকে ঘিরে প্রশাসনের কিছু অংশ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।

রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুপ্রবেশের একাধিক ঘটনা ধরা পড়েছে। বিএসএফের অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীরা ‘বাঙালি মুসলমান’ পরিচয়ে রাজ্যের গভীরে ঢুকে পড়ছে।