রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ১২:০৫ এএম

সীমান্তে মানবিক বিপর্যয়, বাড়ছে যুদ্ধের আশঙ্কা

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ১২:০৫ এএম

সীমান্তে মানবিক বিপর্যয়, বাড়ছে যুদ্ধের আশঙ্কা

‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল’। এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গলে মিলিত হয়েছে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমানা। বন-জঙ্গলে ঘেরা এই অঞ্চলে অনেক মন্দির রয়েছে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে ‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল’ নামের একটি অঞ্চল। এই অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শত বছরের বেশি সময় ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। কম্বোডিয়া একসময় ফরাসি উপনিবেশের অংশ ছিল। ১৯০৭ সালে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি সীমানারেখা নির্ধারণ করে দেয় ঔপনিবেশিক সরকার। তবে পরে ওই মানচিত্র নিয়ে আপত্তি তোলে ব্যাংকক। তাদের অভিযোগ, ১১ শতকে নির্মিত প্রেয়াহ বিহার মন্দির কম্বোডিয়ার ভূখ-ে পড়েছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গড়ায়।

১৯৬২ সালে আদালতের রায় যায় কম্বোডিয়ার পক্ষে। এরপরও ওই মন্দির ঘিরে এলাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব চালিয়ে যায় থাইল্যান্ড। যুক্তি দেখিয়ে ব্যাংকক বলে, আদালতের রায়ের অধীনে ওই এলাকা পড়েনি। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যেই সংঘাত চলছিল। তবে উত্তেজনা চরমে ওঠে ২০০৮ সালে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে এ সীমান্ত বিরোধের সূচনা এক শতাব্দীর বেশি আগে। সেই সময়ে কম্বোডিয়া ফ্রান্সের উপনিবেশ (১৯৫৩ সাল পর্যন্ত) ছিল। ফ্রান্স প্রথমবার দুই দেশের স্থলসীমান্তের মানচিত্র তৈরি করে দেওয়ার পর থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। এরপর ৮১৭ কিলোমিটারজুড়ে (৫০৮ মাইল) বিস্তৃত সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের বিরোধ বারবারই মাথাচাড়া দিয়েছে। আর প্রতিবারই তা দেশ দুটির অভ্যন্তরীণ জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়েছে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সর্বশেষ উত্তেজনা শুরু হয় মে মাসে। তখন সীমান্তের একটি বিতর্কিত এলাকায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে অল্প সময়ের গোলাগুলি হয়। এতে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হন। এর পরপরই শুরু হয় পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া। থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পারাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে। আর কম্বোডিয়া পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি নিষিদ্ধ করে, থাই চলচ্চিত্র সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় এবং থাইল্যান্ড থেকে আসা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। গত বুধবার টহল দেওয়ার সময় থাইল্যান্ডের পাঁচ সেনা স্থলমাইনের বিস্ফোরণে আহত হলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। থাই কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, মাইনগুলো নতুন করে পুঁতে রাখা হয়েছে। প্রতিবাদে থাইল্যান্ড তাদের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কম্বোডিয়ার সঙ্গে সব পথ বন্ধ করে দেয়, দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে। কম্বোডিয়া এসব পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় জানায়, তারা থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনি¤œ পর্যায়ে নামিয়ে আনছে ও ব্যাংককে তাদের দূতাবাস থেকে সব কম্বোডীয় কর্মী ফিরিয়ে নিচ্ছে। কম্বোডিয়া নতুন স্থলমাইন পুঁতে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সীমান্তবিরোধ গত বৃহস্পতিবার চরম রূপ নেয়। এদিন কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় থাইল্যান্ড। অভিযোগ তোলে, কম্বোডিয়া রকেট ও কামান দিয়ে হামলা চালিয়েছে। পাল্টাপাল্টি এ হামলায় দুই দেশেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। উভয় দেশ একে অপরকে আগে গুলি চালানোর জন্য দায়ী করছে। 

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার নতুন করে সংঘর্ষের ক্ষেত্রও সৃষ্টি হয়েছে। উভয় পক্ষই দাবি করছে, তারা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অপর পক্ষকে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। গত ১৩ বছরে এই দুই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ, যাতে এখন পর্যন্ত ৩২ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছে এবং ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শনিবার সকালে থাইল্যান্ডের উপকূলীয় প্রদেশ ত্রাট এবং কম্বোডিয়ার পুরসাত প্রদেশে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এই নতুন সীমান্ত ফ্রন্টটি পূর্ববর্তী সংঘর্ষস্থল থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। মে মাসের শেষদিকে এক কম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়। এর পর থেকেই উভয় দেশ সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে এবং কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে ওঠে, যা থাইল্যান্ডের দুর্বল জোট সরকারকে ভাঙনের মুখে ফেলে দেয়। থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে শনিবার জানানো হয়, এ পর্যন্ত ৭ সেনা ও ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

অপরদিকে, কম্বোডিয়া জানিয়েছে, তাদের ৫ সেনা ও ৮ বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। আহত হয়েছেন ১৩০ জনের বেশি। এদিকে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের পাল্টাপাল্টি হামলায় উত্তপ্ত থাই-কম্বোডীয় সীমান্ত। দুই দিনে নিহতের সংখ্যা ১৬ জন। বাস্তুচ্যুত ১ লাখ ৩০ হাজার। এই সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই।

সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে জরুরি অধিবেশন বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে থাইল্যান্ডের সঙ্গে চলমান সংঘর্ষের অবসানে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে কম্বোডিয়া। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যাংককের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করা জরুরি। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। কম্বোডিয়ার প্রতিনিধি ছিয়া কেও নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, বিতর্কিত সীমান্ত ইস্যুর সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তায় শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ প্রয়োজন।

তবে থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো জানানো হয়নি। সংঘর্ষের কারণে থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী আটটি বিভাগে সামরিক আইন জারি করেছে। শুক্রবার দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, চলমান সংঘাত পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তিনি জানান, সীমান্তের অন্তত ১২টি স্থানে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে লড়াই চলছে। এদিকে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংঘাত নিরসনে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রয়োজন নেই বলে তাদের মত। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!