ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত, পাকিস্তানে ‘অতি উচ্চ’ বন্যা সতর্কতা জারি

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৮:১৭ এএম
ভারত

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই তীব্র মৌসুমি বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত। ভারতের বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার ফলে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে আরও বড় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গত মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ জানায়, টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারতের দুটি বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কারণে এ বিপদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোরও। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই তীব্র মৌসুমি বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত।

ভারতের বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার ফলে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে আরও বড় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধান খাদ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত এ প্রদেশে দেশটির মোট ২৪ কোটি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ বসবাস করেন। পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান গত মে মাসে সংক্ষিপ্ত সংঘাতের পর থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এখন বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করলে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা দেখা দিতে পারে। গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারত রাভি নদীর ওপর থেইন বাঁধের সব কপাট খুলে দিয়েছে।

তবে ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। এ ঘোষণা আসে ভারতের দ্বিতীয় সতর্কবার্তা পাওয়ার এক দিন পর। তাতে বলা হয়েছিল, দ্রুত ভরে ওঠা মাধোপুর বাঁধ থেকেও পানি ছাড়া হবে। দুটি বাঁধই রাভি নদীর ওপর, যা ভারতীয় পাঞ্জাব থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত। পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ইরফান আলি কাঠিয়া বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ।

আগামী ৪৮ ঘণ্টা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র জানান, স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে থেইন বাঁধ ৯৭ শতাংশ পূর্ণ। যেকোনো সময় পানি ছাড়া হতে পারে। ভারত বাঁধে অতিরিক্ত পানি জমলে নিয়মিত তা ছেড়ে দেয়, যা পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় পাঞ্জাব প্রদেশ দুই দেশে বিভক্ত হয়েছিল। দিনের শুরুতে ভারত সরকারের এক সূত্র জানায়, তারা কোনো নির্দিষ্ট বাঁধের নাম উল্লেখ করেনি।

তবে প্রবল বৃষ্টির কারণে টানা দুই দিনে দ্বিতীয় সতর্কবার্তা পাকিস্তানকে কূটনৈতিক চ্যানেলে পাঠানো হয়েছে। আরও সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে সূত্রটি জানায়, তা সম্ভব। অন্য এক ভারতীয় সূত্র বলেন, মানবিক কারণে ইসলামাবাদের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করা হচ্ছে, যাতে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো যায়। কারণ প্রবল বর্ষণে ভারতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে পাকিস্তানে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, পাঞ্জাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ ১৪ আগস্টের পর স্বেচ্ছায় সরে গেছেন। রাভি, শতদ্রু ও চেনাব নদীর তীরবর্তী শতাধিক গ্রাম থেকে লোকজনকে সরানো হচ্ছে। সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছে। তিন নদীতেই মাঝারি থেকে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টায় পাঞ্জাব ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আরও ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল গিলগিট-বালতিস্তানে হিমবাহ দ্রুত গলছে। দক্ষিণের করাচি শহরের বড় অংশও গত সপ্তাহে প্লাবিত হয়েছিল। অন্যদিকে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে প্রবল বৃষ্টিপাতের পরে ভূমিধসে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। জম্মু অঞ্চলের কাটরায় হিন্দু তীর্থক্ষেত্র বৈষ্ণোদেবীর মন্দিরের কাছে ভূমিধস হয়। বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে তীর্থযাত্রা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সিনিয়র পুলিশ সুপার পরমভির সিংকে উদ্ধৃত করে এই খবর দিয়েছে ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআই। অন্যদিকে আরেক পাহাড়ি রাজ্য হিমাচল প্রদেশের তিনটি জেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে পরবর্তী দুদিনের জন্য লাল সংকেত জারি করেছে ভারতীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর। ইতোমধ্যেই বিপাশা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে আর চ-ীগড়-মানালি মহাসড়কের একটি অংশ স্রোতে ভেসে গেছ। প্রসঙ্গত, জুন মাসের ২০ তারিখ থেকে হিমাচল প্রদেশে বর্ষার মরসুমে ৩১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।