মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে তিন থেকে চার দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা শান্তি পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার জন্য। পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করলে খুবই দুঃখজনক পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এতে হামাসের ওপর প্রস্তাবটি মেনে নেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছে। গতকাল বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল ও আরব নেতারা এরই মধ্যে এ পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন। এখন আমরা শুধু হামাসের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। হামাস যদি না মানে, তাহলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। আলোচনার আর বেশি সুযোগ নেই।
এদিকে ইসরায়েলের নৌ-অবরোধ ভেঙে গাজার দিকে এগিয়ে যাওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর মাগরেব শাখার একজন মুখপাত্র গতকাল ভোরে জানিয়েছেন, ফ্লোটিলাটিকে আটকানোর জন্য ইসরায়েলি নৌবাহিনীর কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। জাহাজগুলো বাধা উপেক্ষা করে গাজার দিকে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। ফ্লোটিলার মুখপাত্র ওয়ায়েল নাওয়ার মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জানান, ইসরায়েলি নৌবাহিনী প্রথমে বহরের মূল জাহাজ ‘আলমা’কে আটকাতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বহরের বাকি জাহাজগুলো নির্বিঘেœ পাশ কাটিয়ে যায়। তিনি দ্বিতীয় আরেকটি চেষ্টার বর্ণনা দেন, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী অন্য একটি অগ্রগামী জাহাজ ‘সিরিয়াস’-এর দিকে লক্ষ্য পরিবর্তন করে, কিন্তু সেখানেও বাকি জাহাজগুলো তাকে এড়িয়ে এগিয়ে যায়। নাওয়ার বলেন, ‘আজকে জায়নবাদী (ইসরায়েলি) জাহাজগুলো মূল জাহাজ ‘আলমা’-কে আটকানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু অন্য জাহাজগুলো ‘আলমা’-কে উপেক্ষা করে গাজার দিকে এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও যোগ করেন, যখন ফ্লোটিলা ‘সিরিয়াস’-এর আশেপাশে পুনরায় একত্রিত হয়, তখন ইসরায়েলি নৌবাহিনী সেদিকে মনোযোগ দেয়।
কিন্তু একই ফল হয়, কারণ ‘বহরের বাকি জাহাজগুলো ‘সিরিয়াস’-কে উপেক্ষা করে গাজার পথে যাত্রা অব্যাহত রাখে।’ তিনি জানান, এরপর ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজগুলো বহরটিকে ছত্রভঙ্গ করতে একাধিক দিক থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে, কিন্তু সব জাহাজ কৌশলে নিজস্ব পথে অবিচল থাকে। তিনি এই বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টাগুলোকে ফ্লোটিলার সংকল্পের একটি পরীক্ষা হিসেবে বর্ণনা করেন: ‘যদি আপনারা ৪৭টি জাহাজকেও থামিয়ে দেন, তবুও ৪৮তমটি গাজার দিকে এগিয়ে যাবে।’ এর আগে দিনের বেলায়, গাজাগামী এ মানবিক সহায়তা ফ্লোটিলার কাছাকাছি একটি বড় যুদ্ধজাহাজ দেখা গিয়েছিল এবং আয়োজকরা সমুদ্রে উচ্চ সতর্কতার কথা জানিয়েছিলেন।
ফ্লোটিলার সঙ্গে থাকা আল জাজিরার একজন সংবাদদাতার মতে, কিছুক্ষণ বিচ্ছিন্ন থাকার পর ‘আলমা’ জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সংবাদদাতার ভাষ্য অনুযায়ী, একটি ইসরায়েলি জাহাজ ‘আলমা’র খুব কাছাকাছি মাত্র পাঁচ ফুটের মধ্যে চলে এসেছিল এবং এর সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা, এমনকি ইঞ্জিনও জ্যাম করে অকার্যকর করে দিয়েছিল। তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুযায়ী ‘আলমা’-তে থাকা অংশগ্রহণকারীরা তাদের মোবাইল ফোন সমুদ্রে ফেলে দেন।
সংবাদদাতা পরে জানান, ইসরায়েলি জাহাজটি এলাকা ছেড়ে চলে গেলে ফ্লোটিলাটি গাজা উপত্যকার উপকূলের দিকে তাদের যাত্রা পুনরায় শুরু করে। ইসরায়েলের অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যাত্রা করা এই ফ্লোটিলা ঘোষণা করেছে, তাদের জাহাজগুলো বর্তমানে অবরুদ্ধ গাজা থেকে প্রায় ১২১ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। অবিরাম বোমা হামলায় গাজা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ ও রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে গাজা যুদ্ধ শেষ করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শহরটিকে পুনর্গঠনের কাঠামোগত চুক্তি ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। দ্রুততার সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি অনেকে মেনে নিলেও ভবিষ্যতের স্বার্থে বিষয়গুলো আরো স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন অনেক বিশ্বনেতা। এছাড়া, বিশ্লেষকদের মতে কাঠামোটির বিস্তারিত না থাকার বিষয়টি এই চুক্তির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা এই চুক্তির বড় অংশই এসেছে ট্রাম্পের নিজস্ব তৎপরতা থেকে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রথমবারের মতো ট্রাম্প সরাসরি ইসরায়েলকে যুদ্ধ শেষ করতে চাপ দিচ্ছেন।
তার সঙ্গে দ্বিমত করাও সহজ নয়। কারণ, গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পরিণতি দেখেছেন বিশ্ব নেতারা। তবে নেতানিয়াহু দেশে ফেরার আগেই ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চলমান জাতিগত নিধন অভিযানের মধ্যেই গত আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ইসরায়েলে মোট ১ লাখ ১০ হাজার বুলেট সরাবরাহ করা হয়েছে। চ্যানেল ৪-এর একটি নতুন তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আনাদোলু এই খবর দিয়েছে।
এই চালানের মূল্য প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২৭ হাজার ডলার)। ইসরায়েলে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধির একটি নমুনা হচ্ছে এটি। এই আগস্টে যুক্তরাজ্য থেকে ইসরায়েলে মোট চালানের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডের বেশি, যা মাসিক হিসেবে ২০২২ সালের জানুয়ারির পর থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রতিবেদন অনুসারে, একটি চালানের মাধ্যমে পাওয়া পণ্যগুলোকে ইসরায়েলের কাস্টমস কোডবুকে ‘বুলেট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।