ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিতে সমঝোতা স্মারক

দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বঞ্চিত ৮ হাজার শিক্ষার্থী

রেদওয়ান আহাম্মেদ সাগর, জাবি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ১২:৫৬ এএম

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সঙ্গে জেনিথ ইসলামি লাইফের সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জেনিথ ইসলামি লাইফের জীবন ও স্বাস্থ্য বিমা সুবিধা ভোগ করার কথা থাকলেও নেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ২০২২-২৩ সেশন (৫২তম ব্যাচ) ও ২০২৩-২৪ সেশনের (৫৩তম ব্যাচ) প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীদের এই বিমার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীদের এখনো স্বাস্থ্য বিমায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি।

গত ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জেনিথ ইসলামি লাইফের সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এ স্বাস্থ্য বিমা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বিমায় সব শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত না করায় এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদ বলেন, বড় অঙ্কের বিল মেটাতে গিয়ে পরিবারকে হিমশিম খেতে হয়েছে। অথচ আমরা বিমার সুবিধা পাইনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কম্পট্রোলার অফিসের স্বাস্থ্য বিমা সমন্বয়কারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, বিমার আওতায় কোনো শিক্ষার্থী মারা গেলে পাবে এককালীন ২ লাখ টাকা, জীবিত অবস্থায় হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলে বছরে পাবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসা নিলে পাবে বছরে ১০ হাজার টাকা। তবে কোনো চেম্বারের চিকিৎসা নিলে হবে না। এটি অনুমোদিত কোনো হাসপাতাল অথবা ক্লিনিক হতে হবে। বিমার অর্থ প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থ প্রদান সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক হবে। চিকিৎসা নেওয়ার পরবর্তী ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে আবেদন করে রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা নিয়ে তাদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ছবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থী লাইফ ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত লিংকে ক্লিক করে নিজস্ব আইডি থেকে আপলোড করে দিতে হবে। তখন আমরা কনফার্ম হয়ে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ফরওয়ার্ড করে দেব। কোম্পানি সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অনলাইন ব্যাংকিং অথবা বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা হস্তান্তর করবে। 

তবে জেনিফ ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্সের কর্মকর্তা নাদিয়া আফরোজ বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কেউই স্বাস্থ্য বিমার অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের চুক্তি আছে। নতুন করে কোনো সেশনের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে তথ্য এবং সে অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রে এক সেশন অথবা ইয়ারভিত্তিক অন্তর্ভুক্ত করানো হয়। এ ক্ষেত্রে ছয় মাস বা এক বছর সময়ও যাদের আছে, তারাও স্বাস্থ্য বিমায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। জেনিথ ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল খালেক জানান, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বিমার মাধ্যমে সেবা নেওয়ার হার তুলনামূলক কম। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে একটি সচেতনতামূলক সেমিনার করব, যেন শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় এই সেবা সহজে পেতে পারে।

এ বিষয়ে জাবি ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ তানজিম আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই নিষ্ঠুর উদাসীনতা আমরা মেনে নিতে পারি না। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী স্বাস্থ্য বিমার বাইরেÑ এটা সরাসরি প্রশাসনের অবহেলার নগ্ন উদাহরণ। শিক্ষার্থীদের অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো উন্নয়নের বুলি মানা হবে না। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছে, অবিলম্বে সব শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনতে হবে, নইলে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আমরা আন্দোলনের পথে নামতে বাধ্য হব।

জাকসু ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, শিক্ষার্থীদের ট্রিটমেন্টের জন্য এনাম মেডিকেলে ৩০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা থেকে বঞ্চিত বাকি ৪৬ থেকে ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাইভেট কোনো হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড়ের সুবিধা দেওয়ার জন্য কাজ করছি। স্বাস্থ্য বিমা চলমান রয়েছে, সেখানে ৪৯ থেকে ৫১তম আবর্তনকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করব। জাকসুর নবনির্বাচিত স্বাস্থ্য ও খাদ্যবিষয়ক সম্পাদক হুসনী মোবারক জানান, আমাদের প্রথম কার্যনির্বাহী বৈঠকে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করানোর জন্য উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। সেখানে জাকসুর পরবর্তী সভায় এটিকে অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শিক্ষা সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, ৪৯ ব্যাচে ২০৮৯ জন, ৫০ ব্যাচে ২০৩১ জন ও ৫১ ব্যাচে ২০৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় এই বিমায় অন্তর্ভুক্তির ফি নিয়ে নেওয়া হয়। তাই সহজেই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের দিয়ে এই স্বাস্থ্য বিমা চালু করা হয়েছিল। 

তবে সিন্ডিকেট কর্তৃক এ বিষয়ক একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি কীভাবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিমার আওতায় সব শিক্ষার্থীকে যুক্ত করা যায়, এ নিয়ে একটি রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর করা হবে।