ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

টাউন বাসের সংকট

সিলেটে অকার্যকর গণপরিবহনব্যবস্থা

আব্দুল আহাদ, সিলেট
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০১:০১ এএম

সিলেট শহরের গণপরিবহনব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে সংকটে ভুগছে। মাত্র কয়েকটি টাউন বাস থাকায় যাত্রীরা যেমন বাস চলাচলে দুর্ভোগ পোহান, তেমনি লেগুনা ও সিএনজির ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। কিন্তু এই অপারেটরদের মধ্যে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক সেবার অভাব নগরবাসীর দৈনন্দিন যাতায়াতকে আরও কঠিন করে তুলেছে। সিলেট শহরে টাউন বাসের সংখ্যা খুবই কম। যানজট এবং অপর্যাপ্ত গাড়ির কারণে বাসসেবা অপ্রতুল। বাসগুলো অধিকাংশ সময় যাত্রীদের সেবার মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয় লেগুনা ও সিএনজির ওপর নির্ভরশীল হতে। লেগুনা পরিবহনব্যবস্থায়ও রয়েছে অনিয়ম ও ভাড়ার নৈরাজ্য। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট দূরত্বের জন্য সঠিক ভাড়া আদায় না হওয়া এবং যাত্রী হয়রানি লেগুনা-সিএনজি অটোরিকশার জন্য স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মহানগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক সেলিনা আক্তার বলেন, বাসসংখ্যা কম থাকায় ভিড় হয় ভয়াবহ। কখনো বাস ধরতে পারি না, আবার লেগুনা-সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে ঝামেলা। কখনো দূরত্বের চেয়ে বেশি টাকা দিতে হয়। এটা খুবই হতাশাজনক।

তিনি আরও বলেন, অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী, নারী যাত্রীÑ সবার ক্ষেত্রেই ভাড়া হয়রানি এখন রোজকার যন্ত্রণা। সময়, আবহাওয়া, এমনকি চালকের মেজাজÑ সবই এখন ভাড়ার মাপকাঠি। গণপরিবহনের অভাবে অনেকে সকাল-বিকেল লেগুনা বা রিকশার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন।

বন্দরবাজার-বটেশ্বর-হরিপুর রোডের লেগুনাচালক মোহাম্মদ হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমরা আমাদের খরচ ও সময় বিবেচনা করে ভাড়া ধার্য করি। কিন্তু যাত্রীদের অনেক সময় ন্যায়সঙ্গত ভাড়া দিতে অসুবিধা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় আমরা বুঝে উঠতে পারছি না কী করা উচিত।’

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্য মতে, শহরে চলাচলরত বাসের সংখ্যা মাত্র ৫-৬টি, যেগুলোও অল্প কয়েকটি রুটেই সীমাবদ্ধ। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, এই বাসগুলো হয় দীর্ঘ বিরতিতে চলে, নয়তো ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় সড়কে নামানো হয়। 
শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাস তো দেখি নামেই আছে! আগে কিছুটা হলেও টাউন বাস ছিল, এখন সেগুলোও প্রায় অদৃশ্য। স্কুলে বাচ্চা পাঠাতে হলে সিএনজি ছাড়া উপায় থাকে না।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, আমরা পায়েচালিত রিকশার লাইসেন্স দিই। তাই তার ভাড়াও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। টাউন বাস-লেগুনা-সিএনজি অটোরিকশা সিটি করপোরেশন এলাকায় চলাচল করলেও তার নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। তাই এসব যানবাহনের ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব বিআরটিএর। তবে আমরা বিআরটিএর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করব, যাতে যাত্রী সাধারণের পরিবহন ভাড়ার ভোগান্তি দূর হয় এবং একটি নীতিমালার মধ্যে তাদের আনা যায়। কিন্তু এখনো বেশ কিছু অবকাঠামোগত জটিলতা রয়েছে। পাশাপাশি ভাড়া নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে আলোচনা চলছে।

সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির এক নেতা জানান, আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি নতুন বাস চালুর জন্য, কিন্তু রুট পারমিট ও প্রশাসনিক জটিলতায় সফল হইনি। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান হবে না।

প্রশাসনের দায় এড়ানোর পরিস্থিতিতে দিন দিন জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সিলেটের আয়তন বড় না হলেও জনসংখ্যা এবং চলাচলের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এই শহরে পর্যাপ্ত গণপরিবহন না থাকায় ব্যক্তিগত যানবাহনের ওপর চাপ পড়ছে। টাউন বাস ও লেগুনার অকার্যকারিতা সিএনজি অটোরিকশার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তৈরি করেছে, যা শহরের পরিবহনব্যবস্থায় একপ্রকার বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। এর ফলে ভাড়া নীতিমালা নেই, যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
সিলেটের গণপরিবহনব্যবস্থায় সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু সিএনজি অটোরিকশার নয়, লেগুনা ও বাসব্যবস্থারও মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এই শহর পরিণত হবে এক অচল নগরীতে, যেখানে চলাফেরা করতে হলে দিতে হবে দুর্ভোগের কর।