১ অক্টোরব সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা। এই সময়ের মধ্যেই মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান। তার সঙ্গে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন আরও ১৫ জন পরিচালক পদপ্রার্থী। সরকারি নগ্ন হস্তক্ষেপ আর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তামিম ইকবালের বিএনপিপন্থি পুরো প্যানেল বিসিবি নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে অনেক পরিচালকই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন।
আগের দিন মঙ্গলবার বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে থাকা বিতর্কিত ১৫টি ক্লাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। নির্বাচনে এসব ক্লাবের কাউন্সিলর বা প্রতিনিধির নাম চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম স্থগিত করে দেন হাইকোর্ট। আদালতের এই আদেশের পর থেকেই তামিম প্যানেলের বিএনপিপন্থি প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করবেন বলে আলোচনা ছড়ায় চারদিকে। কেননা, নিষেধাজ্ঞায় পড়া ১৫টি ক্লাবের প্রায় সব ভোটই পাওয়ার কথা তামিম প্যানেলের। পূজার ছুটিতে আদালত বন্ধ থাকায় ৬ অক্টোবর বিসিবি নির্বাচনের আগে নিষেধাজ্ঞায় পড়া ক্লাবগুলোর আপিলের কোনো সুযোগ নেই। তাই নির্বাচন বর্জন করেই প্রতিবাদ জানালেন তামিমসহ হেভিওয়েট প্রার্থীরা।
বিসিবি নির্বাচন থেকে তামিমের সঙ্গে সরে দাঁড়ান রফিকুল ইসলাম বাবু, মাসুদুজ্জামান, সাঈদ ইব্রাহীম আহমেদ, মির হেলাল, সৈয়দ বোরহানুল হোসেন পাপ্পু, ইসরাফিল খসরু, সাব্বির আহমেদ রুবেল, তৌহিত তারেক, অসিফ রাব্বানী, সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, ইয়াসির আব্বাস, ফাহিম সিনহা, সাইফুল ইসলাম সপু, ওমর শরীফ মোহাম্মদ ইমরানসহ অন্যরা।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর সংবাদমাধ্যমকে তামিম বলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার আগে বিসিবি নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করেন। তামিমের বক্তব্য, ‘আমিসহ প্রায় ১৪ থেকে ১৫ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। প্রত্যাহারের কারণটা খুবই স্পষ্ট। আমার কাছে মনে হয় না, বিস্তারিতভাবে আপনাদের কিছু বলার দরকার আছে। নির্বাচন কোন দিকে যাচ্ছে, এই জিনিসটা এখন পরিষ্কার। যখন যেমন মনে হচ্ছে, যখন যা মনে হচ্ছে, তখন তা করা হচ্ছে। এটা আসলেই নির্বাচন নয়, ক্রিকেটের সঙ্গে এই জিনিসটা কোনো দিক থেকেই মানায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা নাম প্রত্যাহার করেছেন, তারা সবাই হেভিওয়েট, তাদের ভোট ব্যাংকও শক্তিশালী।
এটা একটা প্রতিবাদ। দিন শেষে এই নোংরামির অংশ হয়ে আমরা থাকতে পারব না। বাংলাদেশ ক্রিকেট এটা ডিজার্ভ করে না। যারা এভাবে নির্বাচন করতে চান, তারা করতে পারেন। তবে আজ ক্রিকেট শতভাগ হেরে গেছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আপনারা বড় গলায় বলেন বাংলাদেশে ফিক্সিং বন্ধ করা লাগবে, আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তা করেন। পরে ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তা করেন। এই নির্বাচন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা কালো দাগ হয়ে থাকল।’ অন্যদিকে, ইন্দিরা রোড ক্লাবের হয়ে পরিচালক পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চেয়েছিলাম।
২০০৫ সালে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখেছিলাম। আমরা তেমন একটা নির্বাচন চেয়েছিলাম। সমঝোতার কথাটা হাওয়ায় উড়ে বেরিয়েছে, কোনো সঠিক তথ্য ছিল না।’ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে এক্সিউম ক্রিকেটার্সের কাউন্সিলর ইসরাফিল খসরু বলেন, ‘বিসিবি নির্বাচনে নগ্ন হস্তক্ষেপ চলছে। নির্বাচনের কোনো পরিবেশ এখানে নেই। স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো নির্বাচন আমরা চাই না। সরকারের একটি গোষ্ঠী এখানে হস্তক্ষেপ করছে।’