মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৫, ০২:২৬ এএম

খরা দূষণ বিপর্যয়ের মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা।

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৫, ০২:২৬ এএম

খরা দূষণ বিপর্যয়ের মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা।

ইরান তার ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র খরার কবলে পড়েছে। রাজধানী তেহরানে পানির উৎস দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যেতে পারে। যা শহরটি থেকে মানুষকে স্থানান্তরের শঙ্কাও জাগাচ্ছে। এদিকে ইরানের রাজধানী তেহরানে বায়ুদূষণ এখন চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর বায়ুদূষণের কারণে ইরানে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেনÑগড়ে প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছেন ১৬১ জন। সোমবার (১০ নভেম্বর) ইরানের সংবাদমাধ্যম শাফাক নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। তেহরানে বায়ুদূষণ গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যানবাহনের সংখ্যা ও শিল্প-কারখানার ঘনত্ব ক্রমেই দূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, এখন এমন দিন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যেদিন শহরের বাতাস সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে।

অন্যদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে আরেক দফা সর্বাত্মক যুদ্ধ শুধু সময়ের অপেক্ষা।-এমন সতর্কতার কথা জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুনের ১২ দিনের যুদ্ধের পরও ইরান উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধরে রেখেছে এবং একই সঙ্গে হাজারো ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির দৌড়ে ছুটছে। প্রতিবেদনে মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতি আগের ধারণার চেয়ে কম হয়েছে। তাই দুই পক্ষই নতুন সংঘাতের প্রস্তুতি জোরদার করছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের কাছে বর্তমানে ১১টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মতো উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। তেহরান বলছে, তা ধ্বংসস্তূপের নিচে নিরাপদে রাখা। অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দাবি, এসব উপকরণ গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্প পরিচালক আলি ভায়েজ মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাটিকে বলেন, তেহরান এখন একযোগে দুই হাজার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম হতে দিনরাত কাজ চালাচ্ছে। লক্ষ্যÑএকেবারেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অচল করে দেওয়া। জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে ইরান কমপক্ষে ৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। তার ভাষায়, ইসরায়েলের মনে হয় কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই ইরানও পরবর্তী রাউন্ডের জন্য দ্বিগুণ প্রস্তুতি নিচ্ছে।’  ২০১৫ সালে ইরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর পরমাণু চুক্তি সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যায়। ফলে তেহরানের ওপর পুনরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এদিকে ইরান একটি নতুন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নির্মাণ করছে-যেখানে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। গালফ অঞ্চলের কূটনীতিকরা মনে করছেন, এসব কারণে ইসরায়েলের ওপর হামলা ‘প্রায় অবশ্যম্ভাবী’। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিনরা ইরানের সহযোগিতা চায় বলে দাবি করেÑকিন্তু ইসরায়েলকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। সামরিক ঘাঁটি আর হস্তক্ষেপ বজায় রাখলে কোনো সহযোগিতা সম্ভব নয়।’ ভায়েজ জানান, ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। একপক্ষ চায় নতুন পারমাণবিক চুক্তি করে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে।

অন্যপক্ষ মনে করে ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা অর্থহীন বরং মুখোমুখি সংঘাতই সমাধান। তবে উভয় পক্ষের সম্মতি একটি জায়গায়- ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরেক দফা যুদ্ধ যে আসছে, সে বিষয়ে তাদের কোনো সন্দেহ নেই।  ইসরায়েল তাদের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল। ইরান প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছিল ৫০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১,১০০ ড্রোন।  সেই হামলায় ইসরায়েলে ৩২ জন নিহত এবং ৩ হাজারের বেশি আহত হয়। ইরানে প্রাণহানি হয় এক হাজারের বেশি মানুষ। ইসরায়েলের ২৪০টি ভবনের ২,৩০৫টি বাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি হাসপাতালেও ক্ষতি হয়। অন্তত ১৩ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এদিকে ইরান তার ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র খরার কবলে পড়েছে। রাজধানী তেহরানে পানির উৎস দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যেতে পারে। যা শহরটি থেকে মানুষকে স্থানান্তরের শঙ্কাও জাগাচ্ছে। এ অবস্থা দেশটির স্থিতিশীলতা ও পারমাণবিক লক্ষ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে, এবং বিশ্বমঞ্চে দুর্বল করে দিতে পারে। এমন মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেলথের পরিচালক কাভে মাদানি। তিনি বলেছেন, খরা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় দেশটিকে ‘পানি দেউলিয়া’ করে দিতে পারে। যা দেশের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করবে ও বিশ্বমঞ্চের অবস্থানকে দুর্বল করবে। ইরান যদি তাদের নিজস্ব মতবাদে অটল থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। পানি না থাকলে দেশটির স্থিতিশীলতা কমে প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে।

কাভে মাদানি এর আগেও ইরানের পরিবেশগত অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ইরানের এ পরিস্থিতি এক রাতেই তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতির জন্য বহু আগে থেকেই সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল।   ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করেছেন, শীতের আগে বৃষ্টি না হলে তেহরানকে আংশিকভাবে খালি করার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তিনি বাসিন্দাদের পানির ব্যবহার কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। রাজধানী তেহরানকে পানি সরবরাহ করা পাঁচটি প্রধান বাঁধের মধ্যে একটি ইতোমধ্যে শুকিয়ে গেছে। প্রধান জলাধার লাতিয়ান বাঁধে এখন ধারণক্ষমতার ১০ শতাংশেরও কম পানি রয়েছে। কারাজ বাঁধের অবস্থাও একই।  বাঁধটির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ-আলি মোয়াল্লেম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত ৯২ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে রিজার্ভারে মাত্র আট শতাংশ পানি রয়েছে, যা ব্যবহার অনুপযোগী। ইরানজুড়ে পানি সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনমনে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। রাজধানী থেকে শুরু করে খুজেস্তান ও সিস্তান-বালুচিস্তানের গ্রাম পর্যন্ত, জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাবে দৈনন্দিন জীবন-যাপন অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!