বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৬:৪২ এএম

মহান মে দিবস আজ

নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষা সংকটে শ্রমিক শ্রেণি

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: মে ১, ২০২৫, ০৬:৪২ এএম

নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষা সংকটে শ্রমিক শ্রেণি

ছবিঃ রূপালী বাংলাদেশ

দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে সাত কোটি মানুষ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। পেশাজীবীদের প্রায় ৮৫ শতাংশই শ্রমিক, যারা বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশই (৬ কোটি) গ্রামের। অনভিজ্ঞ ও সশিক্ষিত বিভিন্ন বয়সি মানুষ জড়িয়ে আছেন দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতার কাজে। তবুও তাদের নেই আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বা কোনো আইনি সুরক্ষা।

সেই শ্রমিকদের বঞ্চনার ইতিহাস ঘিরে আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। প্রতি বছর ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ের আজকের দিনটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।

ঢাকায় অল্প আয়ের সংসারে মূল্যস্ফীতির চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন সেই শ্রমিকরা। দক্ষিণ এশিয়ায় টানা দুই বছর ধরে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির অনেক নিচে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায়ই সার্বিক মূল্যস্ফীতিকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের শ্রমজীবীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণ এবং চাহিদা ছেঁটে জীবনযাপনের ব্যয় সংকুলান করছেন। জীবিকা নির্বাহ কঠিন হওয়ায় অনেকে আবার শহর ছাড়ারও চিন্তা করছেন। তাদের মধ্যে একজন পোশাক শ্রমিক হিরু মিয়া। গ্রামে আগে তিনি কৃষিকাজ করতেন। ৭ বছর আগে নেওয়া চাকরি হারিয়ে এখন নতুন চাকরি খুঁজছেন। তার মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে নিজের খাবার খরচ ও বাসা ভাড়া মিটিয়ে চলতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
 
হিরুর মতোই শ্রমিকদের বিশাল একটি অংশ গ্রাম থেকে শহরে কর্মমুখী হচ্ছেন। কর্মসংস্থান জুটলেও বঞ্চিতের পরিমাণও তাদের অনেক বেশি। এই খাতের শ্রমিকদের বেশির ভাগই রিকশাচালক, শ্রমিক, চা বিক্রেতা বা দোকানের বিক্রয়কর্মী। এ ছাড়া কৃষিকাজ, ক্যাটারিং, পরিবহন ও নির্মাণ শ্রমিকরাও এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্যে বিশাল একটি অংশ রয়েছে পোশাক খাতে। যারা অর্থনীতিকে সচল রাখছেন।

১৯৭২ সালে দেশে প্রথম ছয়টি শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পর্যায়ক্রয়ে ১৩টি আদালত প্রতিষ্ঠা হলেও মামলাজট কমেনি। পাশাপাশি ঢাকায় একটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালও রয়েছে। তবুও আদালতের বারান্দায় অনেক শ্রমিকের দিন কাটছে।

আইনজীবী ও অধিকার কর্মীরা বলছেন, শ্রম আদালতের স্বল্পতা ও শ্রম আইনের দুর্বলতার কারণেই শ্রম আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। কারণ, আইনে মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমায় ফাঁক রয়েছে। আবার বিবাদিপক্ষের বিবিধ মামলা করার সুযোগ আছে। এরই সুযোগ নিচ্ছেন মালিকেরা।

মামলাজট ও নতুন চাকরির নিশ্চয়তা পেতে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে অনেক শ্রমিকের। যার কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশে প্রায় ১৩২টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হলেও অধিকাংশ শ্রমিক আদালতে যায়নি। তাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ৮ মাসে ১৯টি এবং গত ১৫ মাসে ১১৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় লক্ষাধিক পোশাক শ্রমিক। তারল্য সংকট এবং বিশৃঙ্খলার অভিযোগে এসব কারখানা বন্ধ করেন মালিকপক্ষ। তবে শ্রমিকদের বিশাল একটি অংশ তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
 
কারখানায় কর্ম পরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বিশাল একটি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। একই সঙ্গে নারী কর্মীদের নিরাপদ কর্মস্থলের সংখ্যা আরও কমছে। কর্মশেষে বা মাঝপথে নেই তাদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বা কোনো আইনি সুরক্ষা। নির্দিষ্ট সময়ের কাজ শেষে মেলে না শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের অর্থ। মাঝে শ্রমিক ছাঁটাই, নির্যাতন, পাওনা পরিশোধ না করার ঘটনা, মামলার সংখ্যাও কয়েকগুণ বেড়েছে।
 
অন্যদিকে, বঞ্চিতরা গ্রামে ফিরলেও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার জালেও তারা আসছেন না। ফলে বিপদসংকুল জীবন নিয়ে তাদের ভাসতে হয় অকূল পাথারে।

মে শ্রমিক দিবসের ইতিবৃত্ত: মে দিবসের সূচনা মূলত আজ থেকে ১২৭ বছর আগে আমেরিকান সমাজে। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকাতে শুরু হয় শ্রমিক আন্দোলন। অধিকার আদায়ে শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা সেদিন পথে নেমেছিলেন। কারণ সেই সময় দিনে ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হতো এক একজন শ্রমিককে। কিন্তু বিনিময়ে পারিশ্রমিক ছিল খুবই স্বল্প, যা তাদের জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। এ নিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে তাদের মনে। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ এই আন্দোলন।

১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে একদল শ্রমিক মালিকপক্ষকে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণের দাবি জানান। এ দাবি পূরণের সময় হিসেবে ১৮৮৬ সালের ১ মে নির্ধারণ করেন শ্রমিকরা। কিন্তু কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের এ দাবি কানে তোলেননি। পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালের ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেটে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় হঠাৎ পুলিশের ওপর বোমা হামলায় নিহন হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। নিহত হন প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক। আহত হয়েছিলেন বহু। কিন্তু শ্রমিকদের এই বলিদান বিফলে যায়নি। শিকাগো শহরের রক্তাক্ত ইতিহাস সারা বিশ্বে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে আলোড়ন তোলে।

ঘটনার দুই বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে পালনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৮৯১ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। সেই থেকে শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা দিনে আট ঘণ্টা করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, এই দিনটিকে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলাদেশে মে দিবস পালন: বিশ্বের ৯০টি দেশে সরকারিভাবে মে মাসের প্রথম দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মিছিল, সভা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয় মে দিবস। শ্রমিকদের অধিকার ও দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়।

বাংলাদেশের শ্রমিকের অবস্থা: ২০২৪ সালের হিসাবে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। মোট জনসংখ্যার সাত কোটির বেশি মানুষ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ বা প্রায় ৬ কোটি শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। পেশার শ্রমিকদের নেই কোনোপ্রকার সামাজিক ও আইনি সুরক্ষা। তারা কর্মক্ষেত্রে কোনো সুবিধাও পান না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী এমন শ্রমিকদের ৮০ শতাংশই গ্রামের। যার সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি শ্রমিক।
 
বেক্সিমকো এবং কেয়া গ্রুপের শ্রমিকের বক্তব্য: বেক্সিমকো গ্রুপ এবং কেয়া গ্রুপের কর্মী ছিলেন রংপুর পীরগঞ্জের শাহানশাহ মিয়া এবং আনোয়ার হোসেন। সরকার পতনের পরে সম্প্রতি গ্রুপের কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে। সম্প্রতি তারা রূপালী বাংলাদেশের এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমরা এখনো জানুয়ারি মাসের বেতন পাইনি। অফিসের কাছেই সিকিউরিটি যেতে দেয় না। এখনো চাকরি পাইনি। কী করব জানি না’ বলেন তারা।
 
একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশে প্রায় ১৩২টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হলেও অধিকাংশ শ্রমিক আদালতে যায়নি। তার মধ্যে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে বিজিএমইএর সদস্য এমন ১১৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে কাজ হারিয়েছেন ৯৬ হাজার ১০৪ জন। এসব কারখানার মধ্যে বেশির ভাগই বন্ধ হয়েছে গত আগস্টের পর। তবে আগস্টের পরে বন্ধ হওয়া ৬৯টি কারখানায় কাজ হারিয়েছেন ৭৬ হাজার ৫০৪ জন শ্রমিক।

Link copied!