ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

বললেন প্রধান উপদেষ্টা

বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্যে কাজ করছে সরকার

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৭:৩৫ এএম

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে কাজ করছি, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট একটি এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সব বাংলাদেশি শান্তিতে, গর্বের সঙ্গে, স্বাধীনভাবে এবং মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠান: জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সুপারিশ বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ঢাকাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কার্যালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। 

এ সময় অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা, যে বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই, সেটা মুখের একতা না। বললাম আর ভুলে গেলাম, তেমন না। একেবারে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। প্রলেপ দেওয়া পরিবর্তন না, একদম গভীর থেকে পরিবর্তন করতে হবে। নইলে এক স্বৈরাচার গিয়ে আরেক স্বৈরাচার আসবে। যতই আইন করি না কেন, আসবেই। আমাদের জাতির ভেতরে এমন কিছু রয়ে গেছে যে, আমরা যতকিছুই করি, আগের বীজ রয়ে গেছে। এটা কয়েকটা কাগজের সংস্কার না, মনের গভীরের সংস্কার। সবার প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাই আমাদের পুনর্জন্মের মাস, শুধু স্বৈরাচার বিদায়ের মাস না। আমাদের কাছে এখনো সুযোগ আছে। জুলাইয়ের শিক্ষা এখনো তাজা আছে। আবার আগের পথ বন্ধ করে দেওয়া, আগের পথে আর কখনো যাব না; সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। 

এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৫-১৬ বছর ধরে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা, মানুষের অধিকার বিলীন করা এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। একটা ভয়ংকর সময় পার হয়ে এসেছি। সেই সময়টা আমাদের জন্য ভয়ংকর সময় ছিল। আমাদের প্রায় ৬০ লাখ কর্মীর নামে ভুয়া মামলা দেওয়া হয়েছিল এবং সেই মামলা কিন্তু এখনো তুলে নেওয়া হয়নি। এক বছর সময় অনেক বড় না। এই এক বছরে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) অনেক কাজ করেছেন, এটা সত্য। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু মতপার্থক্য তো থাকবেই। কিন্তু এটাকে অনেক বড় করে দেখিয়ে, জাতিকে বিভক্ত করা ঠিক হবে না। দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, অনেক বিষয়ে তো আমরা একমত হয়েছি। বাকি সংস্কার প্রক্রিয়া চলতে পারে। জনগণের প্রতিনিধিত্বসম্পন্ন সরকার, এটা দরকার। ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করা আর ম্যান্ডেট ছাড়া কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে আরেকটা ন্যাশনাল ডিজাস্টার হতে পারে। শহিদদের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের গর্জন করে বলতে শুনেছি যে, তারা বিচারের আগে নির্বাচন চান না। আমরা চাই বিচার হোক এবং সেটা যেন শতভাগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়। ন্যায্য বিচার হলে কোনো অপরাধী পার পাবে না। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের দলের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে। আগামীতে যে দলই দেশ চালাক, তারা যেন জনগণের আমানত রক্ষা করে, আমরা যেন বিশ্বাসঘাতক না হই।

জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির নেতা আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে জুলুম, নির্যাতন হয়েছে; গুম-খুনের মধ্য দিয়ে রাজনীতি করতে হয়েছে, তার ভয়ংকর রূপ দেখেছি ২৪-এর জুলাইতে। ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে, অসংখ্য মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে যা যা উল্লেখ করা হয়েছে, তার সব হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। অতীতে যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, সেই কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে নতুন বন্দোবস্তের আলোকে দেশ চালাতে হবে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টে, বিচার বিভাগ স্বাধীন করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন করতে, এই প্রতিবেদনের সুপারিশকে সমর্থন করি।

এর আগে জুলাই আন্দোলনে শহিদ হওয়া গোলাম নাফিসের বাবা গোলাম আহমেদ এবং শহিদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ জুলাই শহিদদের স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন। তারা তাদের বক্তব্য জুলাই হত্যাকা-ের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় এনে বিচার সম্পন্ন করা, জুলাই শহিদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, আহতদের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।