- মামলার জবানবন্দি দিলেন আবদুল্লাহ আল ইমরান
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিলেন আবদুল্লাহ আল ইমরান।
আদালতে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিদর্শনে গিয়ে শেখ হাসিনা ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট’ নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল ইমরান এই নির্দেশ শুনেছেন বলে জানান।
জবানবন্দিতে শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তার বাঁ হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। আবদুল্লাহ আল ইমরান বলেন, পঙ্গু হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। গত বছরের ২৬ অথবা ২৭ জুলাই সকাল ৯টা-১০টার দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। একপর্যায়ে শেখ হাসিনা তার কাছে যান। শেখ হাসিনাকে তিনি ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করেন। শেখ হাসিনা তাকে ‘আপা’ বলে ডাকতে বলেন।
আবদুল্লাহ আল ইমরান আরও বলেন, তিনি কোথায় পড়াশোনা করেন, হলে থাকেন কি না, কেন থাকেন না, সে সম্পর্কে শেখ হাসিনা জানতে চান। তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন, আমি আন্দোলনকারী। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, পুলিশ তোমাকে গুলি করেছে? আমি বলি, পুলিশ আমাকে সরাসরি গুলি করে। পুলিশের পোশাকে কারা ছিল, সেটা আমি জানি না। আমার পর আরও চার থেকে পাঁচজনের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। পরে শেখ হাসিনা যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন হেল্পডেস্কের কাছে গিয়ে ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট’ অর্ডার দিয়ে যান, যা আমি শুনতে পাই।’
তবে ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট’ মানে কী, তখন বুঝতে পারেননি বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন আবদুল্লাহ আল ইমরান। তিনি বলেন, একপর্যায়ে তিনি দেখেন, যথাসময়ে তার অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে পারছেন না। তার বাবা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে চাইলেও নিতে পারছিলেন না। তখন তিনি বুঝতে পারেন ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট’-এর মানে। তার পা কেটে তাকে কারাগারে নিতে চেয়েছিল। এ ঘটনার জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দায়ী করেন আবদুল্লাহ আল ইমরান। গত রোববার এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়েছে। গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তার এক বছরের মাথায় এই মামলার মাধ্যমে সেই অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক আছেন। তাদের আত্মসমর্পণ করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ, অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনসহ যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন। রোববার তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মামলার কার্যক্রমের কিছু অংশ বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :